নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এসডিপিও-এর তৎপরতায় মায়ের কাছে ফিরল হারিয়ে যাওয়া মেয়ে। রবিবার রাতে ভ্যাবলা স্টেশন থেকে উদ্ধার হয়েছিলেন চন্দনা মণ্ডল নামে ওই মহিলা। বারাসত আদালতের এক মহিলা কর্মী বসিরহাটের এসডিপিও দপ্তরে নিয়ে যান ওই মহিলাকে। ব্যবস্থা করা হয় চিকিৎসার। কিছুটা সুস্থ হয়ে ওই মহিলা নিজেই জানান তাঁর জীবনের গোটা ঘটনা। চন্দনাদেবীর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তাঁকে পরিবারের হাতে তুলে দিলেন এসডিপিও।
চন্দনাদেবী জানান, আসানসোল দক্ষিণ থানার বুদা মোড় এলাকার বাসিন্দা তিনি। কয়েকবছর আগে বিয়ে হয় কাজল মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। ২০১৪ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় স্বামীর। এরপর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। হঠাৎই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। এরপর কয়েক মাস আগে হিঙ্গলগঞ্জ পৌঁছন চন্দনাদেবী। সেখানে একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে শুরু করেন। কিছুদিন পর চন্দনাদেবী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে শিয়ালদহ স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে আসা হয় বলে অভিযোগ। তিনি জানান, এরপর ফের হিঙ্গলগঞ্জ ফিরেন। এলাকার এক মহিলা তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। ওই পরিবারের উদ্যোগে হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা উদয় মণ্ডলের সঙ্গে ফের বিয়ে হয় তাঁর। ঘটনাচক্রে উদয়বাবুকেও হারিয়ে ফেলেন তিনি। ঠাঁই হয় ভ্যাবলা স্টেশন।
তাঁর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হিঞ্জলগঞ্জে চন্দনা দেবীর স্বামী ও আসানসোলে তার পরিবারের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। এরপরই হদিশ মেলে তাঁদের। বুধবারই বসিরহাটের এসডিপিও-এর দপ্তরে হাজির হন চন্দনাদেবীর মা ও স্বামী। তাঁদের দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন চন্দনাদেবী। উদয় বাবু জানান, কিছুদিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে চেন্নাই যাচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় চেন্নাই স্টেশন থেকে হারিয়ে যান চন্দনাদেবী। অনেক খুঁজেও স্ত্রীকে পাননি উদয়বাবু। চন্দনা দেবী বলেন, “কিভাবে হিঙ্গলগঞ্জ পৌঁছেছিলাম জানি না। কিভাবে ভ্যাবলা স্টেশন এ পৌঁছলাম জানি না। তবে পাঁচ বছর পর মাকে ও স্বামীকে পেয়ে খুব ভাল লাগছে।”
মেয়েকে ফিরে পেয়ে আপ্লুত মিনা দেবী। তিনি বলেন, ” দীর্ঘদিন মেয়েকে হারানোর যন্ত্রণা ভোগ করেছি। অবশেষে মেয়ে ও নতুন জামাইকে একসঙ্গে পেয়ে খুব ভাল লাগছে।” এ বিষয়ে এসডিপিও অভিজিৎ সিনহাপাত্র বলেন, “রবিবার এক ভদ্রমহিলা চন্দনাদেবীকে নিয়ে আসেন। আমি চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। যতটুকু ঠিকানা বলতে পেরেছিলেন তার উপর ভিত্তি করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। আজ ওনার পরিবারের সদস্যরা এলেন। পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য ওঁনাদের এসডিও কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা খুশি মেয়েকে মায়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে পেরে। “
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.