স্টাফ রিপোর্টার: বিধবা পুত্রবধূর বিবাহ-বহির্ভূত প্রেমে ‘পথের কাঁটা’ হয়ে উঠেছিলেন শাশুড়ি। আর তাই নিজের বাড়িতেই খুন হতে হল তাঁকে। শাশুড়িকে খুনের মূলচক্রী পুত্রবধূ। বৃদ্ধা শাশুড়িকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর সাজিয়ে ফেলেছিল সুন্দর নাটকীয় গল্প। প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে। অবশ্য নাটক করেও হল না শেষরক্ষা। পুলিশের কাছে ধরা পড়ে গেল তারা।
ঠিক কী অভিযোগ? অভিযুক্ত পুত্রবধূ পুলিশকে জানায়, বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল। ডাকাতিতে বাধা দিতে গিয়েই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন শাশুড়ি। গত ২৪ আগস্ট পুলিশকে অভিযুক্ত পুত্রবধূ বয়ান দেয়, “আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে শাশুড়িকে ডাকতে যাই। সাড়া না পেয়ে দরজা খুলতে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে আটকানো নেই। ঘরে ঢুকে দেখি মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। মুখে বালিশ চাপা। ঠোঁটের কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। সম্ভবত ডাকাতরা ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে আমার শাশুড়িকে খুন করেছে।” কিন্তু এই দাবি ঠিক মানতে পারছিলেন না পুলিশের কর্তারা। তাঁদের সন্দেহ হয়, পাশের ঘরে থেকেও ডাকাতির কোনও শব্দ পেলেন না পুত্রবধূ অসীমা বিশ্বাস? শুধু তাই নয়, খুনের ধরন দেখে পুলিশের মনে হয়, ওভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ওই বৃদ্ধাকে শুধু কোনও পরিচিতই খুন করতে পারে। ডাকাতরা কেন ওইভাবে খুন করবে? সম্পত্তি সংক্রান্ত কারণে বা অন্য কোন বিশেষ কারণে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা হয় পুলিশের।
শেষ পর্যন্ত, খুনের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে পাঁচদিন পর গ্রেপ্তার করা হয় পুত্রবধূকে। গ্রেপ্তার করা হয় তার প্রেমিককেও। উন্মোচন হয় সত্তর বছরের বৃদ্ধা খুনের রহস্যের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্তর বছরের ওই বৃদ্ধা খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২৩ আগস্ট রাতে নদিয়ার হাঁসখালি থানার বগুলা কলেজ পাড়ায়। খুন হয়েছিলেন বীণাপাণি বিশ্বাস (৭০)। পরদিন সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। নিজেরই ঘরের বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ওই বৃদ্ধাকে। ওই বৃদ্ধার দুই ছেলে। বড় ছেলে মারা গিয়েছেন। ছোট ছেলে কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। কর্মসূত্রে বাড়িতে থাকেন না। আর এটাই বিবাহ-বহির্ভূত প্রেমকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ এনে দেয় পুত্রবধূ অসীমা বিশ্বাসকে। যদিও শাশুড়ি খুনের পর পুলিশ ও প্রতিবেশীদের বিভ্রান্ত করতে সাজিয়ে ফেলেছিল নাটক।
কিন্তু তদন্তে উঠে আসে অন্য তথ্য। পুলিশ জানতে পারে, অসীমা বিশ্বাসের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের দেবাশিস ওরাও নামে একজনের গড়ে উঠেছিল বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক। অসীমার বাড়িতে ওই ব্যক্তির নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সম্ভবত শাশুড়ি বীণাপাণিদেবী তা মেনে নিতে পারছিলেন না। ওই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তিনি বিধবা পুত্রবধূকে বাড়ি ছাড়তে বলেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের ‘পথের কাঁটা’। সেই কাঁটা উপড়ে ফেলার ছক কষছিল অসীমা বিশ্বাস ও তার প্রেমিক। ছক কষে খুন করে তা ডাকাতির নাটক করে পুলিশ ও সবাইকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে অসীমা। শেষ অবধি ফাঁস হয়ে যায় সাজানো নাটকের নেপথ্যে থাকা প্রকৃত রহস্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.