রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: মায়ের ইচ্ছায় বিএসএফে (BSF) যোগদান মেয়ের। বাবা ছিলেন বিএসএফের একজন সৈনিক, রাজস্থানে কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর মায়ের ইচ্ছাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার পর বিএসএফে যোগদান করতে চলেছেন ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে অম্বিকা বাওয়ালী। তাঁর বাড়ি তেহট্টের মোবারকপুর গ্রামে।
অম্বিকা জানান তাঁর বাবা অধীর কুমার বাওয়ালি ছিলেন বিএসএফের ১২৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের একজন সৈনিক। গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার। তাঁরা তিন বোন, মা গৃহবধূ। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবার মৃত্যুর পর মা সুনীতি বাওয়ালি দুই বোনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। অম্বিকা বলেন, “মায়ের ইচ্ছা বাবার মত আমিও যেন সেনাবাহিনীতে যোগদান করে দেশের জন্য কাজ করি। সেদিনের মায়ের কথার মান্যতা দিয়ে শুরু করি অক্লান্ত পরিশ্রম, সকাল বিকেল নিয়ম করে চলে শরীরচর্চা, ভর্তি হই বেতাই ফৌর্স এসোসিয়েশন নামে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের। এই শিবিরে মূলত সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। পুরো এক বছর ধরে শিবিরে প্রশিক্ষণ এবং নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে মায়ের কথা রাখতে ইচ্ছা ও মনের শক্তি নিয়ে এগোতে থাকি।”
জানুয়ারি মাসে নদীয়ার কল্যাণীতে বিএসএফ নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। নির্দিষ্ট সময়ে প্রত্যেকটি পরীক্ষায় পাশ করেন অম্বিকা। কয়েকদিন আগেই অম্বিকাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ১৩ ই মে মালদা জেলার ১১৫ নম্বর ব্যাটেলিয়নে যোগদান করতে হবে। অম্বিকার মতে, “এই সাফল্যের পিছনে আমার মায়ের অবদান অপরিসীম, এছাড়া বেতাই ফোর্স এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ পেয়ে সেনাবাহিনীতে যোগদানের পথ সহজ হয়েছে।”
মা সুনীতি বাওয়ালি বলেন, “বাবা ছিল একজন সৈনিক, দেশকে ভালোবেসে সৈনিকের কাজ বেছে নিয়েছিল। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাজস্থান বিএসএফের হেড কোয়ার্টার থেকে ফোন আসে আমার স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এই খবর পাওয়ার সাথে সাথে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তবে দুই ছোট মেয়েকে বাবার মত দেশকে ভালবেসে সৈনিক বিভাগে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলি। সেই থেকে মেয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রস্তুতি নিয়ে আগামী ১৩ মে বিএসএফের যোগদান করবে। আশা করছি মেয়ে যে কোন মূল্যে ওর বাবার মত দেশকে রক্ষা করার জন্য সমস্ত বাধা অতিক্রম করবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.