ছবি: প্রতীকী
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ছেলের জন্মের শংসাপত্র নেই। ভোটার কার্ডও করাতে পারছিলেন না। ফলে নাগরিকপঞ্জির নবায়ন হলে ছেলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে আতঙ্কে পড়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জৌগ্রামের তেলে এলাকার এক মহিলা। সেই আশঙ্কা থেকেই সম্ভবত গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন তিনি। এমনই মনে করছেন পরিবারের সদস্যরা। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।
শনিবার সকালে জৌগ্রামের তেলে এলাকার বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় শিপ্রা শিকদার নামে বছর ছত্রিশের এক গৃহবধূর দেহ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মৃতের ভাসুর বিপ্লব শিকদার দাবি করেন, তাঁর ভাইপো কমলের জন্মের শংসাপত্র নেই। ভোটার কার্ড করাতে পারছিল না। কিন্তু ভ্রাতৃবধূ শিপ্রা ও ভাই সুভাষের তা রয়েছে। ছেলের ভোটার কার্ড ও জন্মের শংসাপত্র নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেও তা করাতে পারছিলেন না। তাতেই শিপ্রা আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন বলেন জানান বিপ্লববাবু। তিনি বলেন, “সেই আতঙ্ক থেকেই শিপ্রা আত্মহত্যা করেছেন।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০ বছর ধরে বিপ্লববাবুরাওই এলাকায় বসবাস করছেন। শিপ্রাদেবী, তাঁর স্বামী ও মেয়ে সুমির ভোটার কার্ড-সহ অন্যান্য নথিপত্র হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ছেলে কমলের তা কোনওভাবেই করাতে পারছিলেন না। এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন হওয়ার পর ছেলের জন্য আতঙ্ক বাড়ে শিপ্রার। সেই কারণেই এই ঘটনা বলে দাবি বিপ্লববাবুর।
সুভাষবাবু পেশায় দিনমজুরের কাজ করেন। ছেলেও তাঁকে সহায়তা করেন। জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহমুদ খান জানিয়েছেন, তিনিও পরিবার সূত্রে জানতে পেরেছেন ছেলের জন্মের শংসাপত্র ও ভোটার কার্ড করাতে না পারায় এনআরসি আতঙ্কে ভুগছিলেন বলেই আত্মঘাতী হয়েছেন। তিনি জানান, কয়েকমাস আগেও একইভাবে এনআরসি আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে কমল ঘোষ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল টেঙ্গাবেড়িয়া এলাকায়। এবার জৌগ্রামে।
যদিও এই আতঙ্কে শিপ্রাদেবী আত্মঘাতী হয়েছেন, পরিবার বা তৃণমূলের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। দলের জেলা সহসভাপতি সুধাময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পালটা দাবি, এনআরসি আতঙ্ক থেকে এই ঘটনা নয়। আর্থিক সংকট ছিল পরিবারে। তাই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তিও হত। তারই জেরে ওই বধূ আত্মঘাতী হয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.