ছবি: প্রতীকী
বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: এক মহিলার শরীরের দু’টি প্রকোষ্ঠে দুটি জরায়ু। সেই দুই জরায়ুতে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে দুটি প্রাণ। চিকিৎসার মাধ্যমে মাতৃগর্ভে দুই সন্তানকে বাড়তে দিতে সময় লেগেছে প্রায় ৩৭ সপ্তাহ। অবশেষে প্রায় এক ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর দুই সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন মহিলা। এক পুত্র ও এক কন্যা। সদ্যোজাতদের ওজনও একপ্রকার স্বাভাবিক। বিরল এই অস্ত্রোপচার করে নজির গড়লেন নদিয়ার শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার ডা. পবিত্র ব্যাপারী, অ্যানাস্থেসিস্ট ডা. অভিজিৎ পাল। সহযোগী হিসেবে ছিলেন সিনিয়র ডাক্তার ডা. অভিজিৎ হালদার।
গোটা পৃথিবীতে এ ধরনের মোট ১৬টি কেস নথিভুক্ত রয়েছে। আর শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের এই অস্ত্রোপচারটি সম্ভবত ভারতের প্রথম কেস হিসেবে নথিভুক্ত হতে চলেছে। সেক্ষেত্রে এটি হবে ১৭ তম কেস। পরিকাঠামোগত অভাব থাকা সত্ত্বেও বিরল এই অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডা. তারক বর্মন জানিয়েছেন,”একটু ঝুঁকি নিয়েই এই অপারেশন করতে হয়েছে। আমাদের হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক নেই। অবশ্য ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট রয়েছে। সেক্ষেত্রে মজুদের থেকে বেশি রক্ত লাগলে সমস্যায় পড়তে হত। তবু ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। বর্তমানে মা আর দুই সদ্যোজাত সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।”
রোগীর নাম মামনি খাতুন। বাড়ি নদিয়ার (Nadia) পলাশীপাড়া রুদ্রনগর গ্রামে। ওই গ্রামের বাসিন্দা হাসিবুল শেখের সঙ্গে বিয়ের পর মামনি দু’বার অন্তসত্ত্বা হয়েছিলেন। তবে দু’বারই গর্ভপাত হয়ে যায়। সন্তানের মা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে ওই দম্পতি শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট ডা. পবিত্র ব্যাপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তৃতীয়বার সন্তান গর্ভে আসার আগে থেকেই ডা. পবিত্র ব্যাপারীর কাছে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন ওই দম্পতি। চিকিৎসায় সাড়া মেলে। তৃতীয়বার গর্ভে সন্তান আসে মহিলার। ডা. ব্যাপারী আগেই জানিয়েছিলেন, গর্ভস্ত মামণি খাতুনের শরীরে দু’টি প্রকোষ্ঠে রয়েছে দুটি জরায়ু। তাই খুব সতর্কভাবে তিনি তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
মামনি খাতুনের স্বামী হাসিবুল শেখ জানান, “আমাদের থেকে অনেক বেশি চিন্তায় ছিলেন ওই ডাক্তার। ওঁর প্রত্যেকটি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।” কলকাতার হাসপাতালে রেফার না করে এখানেই এতটা ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়ে ডা: পবিত্র ব্যাপারী বলেন, “আসলে রোগীর বাড়ির লোকজনের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল না। তাদের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই আমাদের হাসপাতালে পরিকাঠামোর ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় অপারেশন করা হয়েছে।” দুই সদ্যোজাত সুস্থ হওয়ায় মুখে হাসি বাবা-মায়ের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.