দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সারা বিশ্ব জুড়ে যখন মানুষের মৃত্যুমিছিল চলছে, সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে তৃতীয় দফার লকডাউন চলছে তখন শেওড়াফুলি ১ নং প্ল্যাটফর্মের ঠিক ওভারব্রিজের তলায় পুত্রসন্তান প্রসব করলেন প্ল্যাটফর্মবাসী এক মহিলা। কিন্তু সন্তান প্রসবের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ওই মহিলা বা তাঁর সন্তানের কোনও চিকিৎসা পরিষেবা মেলেনি। এমনকী রেলের পক্ষ থেকেও কোনও উদ্যোগ নিয়ে যে ওই মহিলা বা তাঁর সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া—সেই সুবিধাটুকুও জোটেনি ওই মহিলার কপালে।
তবে অনেকেই মনে করছেন যেহেতু দেশজুড়ে লকডাউন চলছে তাই রেল স্টেশনগুলি জনমানবশূন্য হওয়ার কারণে রেল কর্তৃপক্ষের হয়তো নজরে আসেনি বিষয়টি। কিন্তু বিষয়টি নজরে আসার পর শ্রীরামপুর দে স্ট্রিটের বাসিন্দা মোহিত কুমার দে মানবিকতার খাতিরে প্রত্যেক দিন নিয়ম করে ওই মহিলাকে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসছেন। সদ্য মা হওয়া ওই মহিলার নাম টুম্পা পাসোয়ান। স্বামী সন্তোষ পাসোয়ান যখন যেখানে কাজ পায় কাজ করে। কাজ না পেলে ভিক্ষে করেই স্বামী-স্ত্রীর সংসার চলে। মাথা গোঁজার কোনও ঠাই না থাকায় প্ল্যাটফর্মের ওই দম্পতির বাস।
পাঁচদিন আগে প্রসূতি টুম্পা একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু তারপর থেকেই ওই মহিলা ও তাঁর সন্তান ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবাটুকুও পাননি। বর্তমানে ওই পাঁচ দিনের পুত্রসন্তানকে নিয়েই করোনা আতঙ্কের মধ্যেই প্ল্যাটফর্মের এক অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন মা ও সদ্যোজাত। যে কোনও সময় তাদের দুই জনেরই জীবনে বিপর্যয় ঘনিয়ে আসতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দা মোহিত কুমার দে জানান, তিনি এলাকার মানুষের কাছ থেকে ওই প্রসূতি ও তার সন্তানের কথা জানতে পারেন। তারপর নিজেই দুই বেলা প্রসূতি মাকে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসছেন।
মোহিতবাবুর আবেদন, রেল কর্তৃপক্ষ অথবা স্থানীয় প্রশাসন যদি অবিলম্বে প্রসূতি মা ও তার সন্তানের চিকিৎসার জন্য যেন উদ্যোগ নেন। কিন্তু পাঁচদিন পরও প্রসূতি মা ও তার সন্তানের কপালে কোনওরকম চিকিৎসা পরিষেবা না মেলায় আশঙ্কিত এলাকাবাসী জানিয়েছেন যে কোনও সময়েই সংক্রমণজনিত কারণে মা ও সন্তানের মৃত্যু হতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.