স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: এক মাসের সন্তানকে ফিরে পেতে মহকুমা আদালতের দ্বারস্থ মা। শিশুর মা বলে দাবি করা মহিলার অভিযোগ, জোর করে সন্তানকে আটকে রেখেছে শিশু সুরক্ষা কমিটি। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে সুরাহা হয়নি। তাই আদালতে আবেদন জানিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।
আদালতের দরজায় কড়া নাড়া মহিলার নাম ইন্দ্রাণী কুন্ডু। তিনি জানিয়েছেন, ২০২২ সালের দুর্গাপুরের (Durgapur) কোকওভেন থানার করঙ্গপাড়ার সৈকত দত্ত নামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইন্দ্রাণীর অভিযোগ, শারীরিক সম্পর্কে আপত্তি থাকায় নানান প্রলোভন দিতে থাকেন সৈকত। তার পরেই দুর্গাপুরের সিটিসেন্টারের একটি হোটেলে ইন্দ্রাণীর সঙ্গে সহবাস করেন ওই যুবক। ফের ২০২৩ সালের জুন, আগস্ট ও ডিসেম্বর মাসে তাঁরা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। ইন্দ্রাণী বলেন, “এর পর আমি চিকিৎসকের কাছে যাই। চিকিৎসক জানায় আমি গর্ভবতী।”
এই ঘটনা জানতে পেরে সৈকত ইন্দ্রাণীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিও দেয় বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারি। ইতিমধ্যেই, ২০২৪ সালের ২৬ মে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতলে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় ইন্দ্রাণী। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর সৈকত সদ্যোজাতকে পরিবারকে দেখানোর জন্য নিয়ে যায়। যাতে সন্তান দেখে বিয়েতে রাজি হয় পরিবার এই আশ্বাস ইন্দ্রাণীকে দেয় সৈকত। সৈকতের হাতে সন্তানকে তুলে দিয়ে বাড়ি ফিরে যান ইন্দ্রাণী। ২৭ মে কোকওভেন থানার পুলিশ ইন্দ্রাণীকে খবর দেয় নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কারণ, তাঁর সদ্যোজাত সন্তান ভর্তি আছে মহাকুমা হাসপাতালে। হাসপাতালে গিয়ে ইন্দ্রাণী জানতে পারেন সদ্যোজাত সন্তানকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য নিউটাউনশিপ থানার এমএএমসিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ওই সদ্যোজাত সন্তানকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে (Durgapur Sub Divisional Hospital) ভর্তি করে।
ইন্দ্রাণী বলেন, “এই ঘটনার পর আমি সৈকতের বাড়িতে যেতেই তার মা অপর্ণা দত্ত বলেন, ছেলে যা করেছে বেশ করেছে। এর পর বাড়িতে এলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। ১৫ জুন সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর সদ্যোজাতকে শিশু সুরক্ষা কমিটি নিয়ে চলে যায়। আমি জানতে পেরে শিশু সুরক্ষা কমিটির কাছে একাধিকবার আবেদন করেছি, আমার সন্তানকে আমি পেতে চাই। ওই দপ্তর কোনও সহযোগিতা না করায় দুর্গাপুরের কোকওভেন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে যাই। সেখানেও কোনও অভিযোগ নেওয়া না হলে বিচারের আশায় দারস্থ হই দুর্গাপুর মহকুমা আদালতের।”
সন্তানকে ফিরে পেতে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে মামলা করেন ইন্দ্রাণী কুণ্ডু। সৈকত দত্ত বলেন, “আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার পাড়ায় থাকলেও ওই মহিলার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি যতটুকু জানি ওই মহিলার চরিত্র ভালো নয়। আমার হাতে কোনও শিশু দেওয়া হয়নি। আর শিশুকে ফেলে দেওয়ার কথা ভাবতেও পারি না।
জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান পরমেশ্বর খাঁ বলেন, “পরিত্যক্ত জায়গা থেকে শিশুকে পুলিশ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসার পর নিয়ে এসে আমাদের তত্ত্বাবধানে রেখেছি। থানার কাছ থেকেও রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। এই শিশুর প্রকৃত মা কে সেই নিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে থানার ও জেলা প্রশাসনের কাছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.