শুভদীপ রায়নন্দী, শিলিগুড়ি: করোনা নিয়ে আতঙ্কিত প্রায় সকলেই। কোনও এলাকায় কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন শুনলেই রে রে করে উঠছেন অনেকেই। দেহ দাহতেও বাধার অভিযোগ সামনে এসেছে বারবার। এবার সেই আতঙ্ক থেকেই একেবারে বিরল কাণ্ড ঘটিয়ে বসলেন এক মহিলা। করোনা আতঙ্কে ছেদ পড়ল দাম্পত্যেও। স্বামী করোনা আক্রান্ত শুনেই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হল তাঁকে। বাধ্য হয়ে বাড়ির সামনে হাপিত্যেশ করে বেশ কিছুক্ষণ বসেও থাকতে দেখা যায় ওই ব্যক্তিকে। পরে অবশ্য কোভি়ড হাসপাতালেই ভরতি করা হয় তাঁকে। এই ঘটনা নিয়ে শিলিগুড়ির হায়দারপাড়া এলাকায় শোরগোল।
শিলিগুড়ির হায়দারপাড়ায় একটি বাড়িভাড়া নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন ওই ব্যক্তি। কিছুদিন আগে তাঁর শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। তাই সোয়াব টেস্ট করিয়েছিলেন তিনি। বুধবার সন্ধেয় মোবাইলে মেসেজ আসে। ওই ব্যক্তি জানতে পারেন তিনি করোনা আক্রান্ত। সেকথা জানান স্ত্রীকেও। এরপরই তাঁর স্ত্রী রণচণ্ডী মূর্তি ধারণ করে। স্বামীকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই ব্যক্তির ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন দক্ষিণ একটিয়াশালেও একটি বাড়ি রয়েছে। ভেবেছিলেন সেখানে গিয়ে হোম আইসোলেশনে থাকবেন। কিন্তু ততক্ষণে সেখানকার বাসিন্দাদের ব্যক্তির স্ত্রী জানিয়ে দেন যে তাঁর স্বামী করোনায় আক্রান্ত। এরপর সেখানেও তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাড়িতে না ঢুকতে পেরে বাধ্য হয়ে রাস্তায় বসে থাকেন কয়েকঘণ্টা।
এদিকে ওই ব্যক্তিকে এলাকায় থাকতে দেওয়া যাবে না এই দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন কিছু এলাকাবাসী। এমনকি ইস্টার্ন বাইপাসে পথ অবরোধও শুরু করেন তারা। আটকে দেওয়া হয় সমস্ত ট্রাক। শেষমেশ খবর পেয়ে হাজির হয় পুলিশ। স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুল্যান্স আনা হয়। তারপর ব্যক্তিকে পাঠানো হয় কোভিড হাসপাতালে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ব্যক্তি এখানে থাকেন না। অন্যত্র থাকেন। এখানে আসার পর তাঁকে হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলি। না যাওয়ায় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতেই আমরা পথ অবরোধ শুরু করি।
তবে যেখানে বারবার প্রচার করা হচ্ছে আমাদের লড়াই রোগের বিরুদ্ধে৷ রোগীর বিরুদ্ধে নয়। সেখানে এমন ঘটনায় পর কিছু মানুষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বহুক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে করোনা রোগীদের পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ হয়ে উঠলেও তাদের এলাকায় থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে এই অবস্থায় স্থানীয়দের আরও সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসক ও সমাজকর্মীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.