রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: সংসার সুখের হয়নি। ভেবেছিলেন জীবন শেষ করে দেবেন। তবে একা নয়, একসঙ্গে মৃত্যু চেয়েছিলেন দম্পতি। আর সে কারণে দুই সন্তানকে অন্যত্র সরিয়ে রেখে বন্ধ ঘরে স্বামীর গায়ে আগুন লাগিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন স্ত্রী। নদিয়ার তেহট্টের বেতাই দক্ষিণ জিতপুর এলাকার এই ঘটনা প্রায় সকলেই অবাক করেছে। মৃত্যু হয়েছে মহিলার। কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তাঁর স্বামী।
কৃ্ষ্ণ সরকার ও কাকলি সরকারের বিয়ে হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। নদিয়ার তেহট্টের বেতাই দক্ষিণ জিতপুর এলাকার বাসিন্দা তাঁরা। দুই সন্তানও রয়েছে তাঁদের। দম্পতির প্রতিবেশীদের দাবি, ইদানীং কৃষ্ণ ও কাকলির দাম্পত্যে শীতলতা তৈরি হয়। প্রায়শয়ই তাঁদের ঘর থেকে ঝগড়াঝাটির শব্দও পাওয়া যেত। তবে ঠিক কী কারণে দু’জনের মধ্যে অশান্তি হত, তা জানতেন না কেউই। বুধবারও সন্ধের পর ঝগড়াঝাটি হয়েছিল স্বামী-স্ত্রীর।
বুধবার রাতে সময়মতো খাওয়াদাওয়া সেরে নেন তাঁরা। রাত ১২টা নাগাদ দুই সন্তানকে পাশের ঘরে রেখে আসেন কাকলি। সেই সময় অন্য ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন কৃষ্ণ। সন্তানরা ঘুমনোর পর স্বামীর ঘরে আসেন কাকলি। ভিতর থেকে ঘর বন্ধ করে দেন। ঘুমন্ত স্বামীর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে দেন। লাগিয়ে দেওয়া হয় আগুনও। স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেননি কাকলি। পরিবর্তে তাঁকে জাপটে ধরে শুয়ে পড়েন তিনি।
কিছুক্ষণের মধ্যে পোড়া গন্ধ পেতে শুরু করেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা ওই দম্পতির বাড়ির সামনে পৌঁছন। দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে শুরু করেন। ততক্ষণে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে প্রায় গোটা এলাকা। এরপর বাধ্য হয়ে দরজা ভেঙে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়েন প্রতিবেশীরা। তাঁরা স্বামী ও স্ত্রীকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় তেহট্ট থানার পুলিশ। তবে ততক্ষণে মৃত্যু হয় গৃহবধূর। মহিলার স্বামী কৃষ্ণকে কৃষ্ণনগর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছে তাঁর। অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। আপাতত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। পুলিশ মহিলার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। ঠিক কী কারণে এই চরম সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত ওই দম্পতির প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয় সম্পর্কে তথ্যের খোঁজে পুলিশ। তবে এহেন ব্যতিক্রমী ঘটনা যে সকলকে অবাক করেছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.