রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: ‘দিদিকে বলো’ নম্বরে ফোন করে সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানালেন আলিপুরদুয়ারের এক গৃহবধু। আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া চাপরেরপার ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্মশানখলা এলাকার ওই গৃহবধুর দাবি, সোমবার দিদিকে বলো কর্মসূচিতে দেওয়া ফোন নম্বরে তিনি ফোন করেন। সেখানে তার কাজ আর নাহলে সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছেন ওই মহিলা। স্বামীর চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে সাহায্যেরও আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
শ্মশানখলা এলাকার ওই গৃহবধুর নাম সুস্মিতা মালাকার। তিনি বলেন, “২০১৬ সালে বাইক দুর্ঘটনায় স্বামী গুরুতর জখম হন। তার পরে অসুস্থ স্বামীর তিনবার জটিল অপারেশন হয়। স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে বসতবাড়ির জমির একটি অংশ কম টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। ঋণে জর্জরিত হয়ে গেছি আমরা। পাওনাদারদের লাগাতার ফোনের কারণে মোবাইলের ফোন সুইচ অফ করে রাখি। আমার স্বামী শয্যাশায়ী। তাঁর আর চিকিতসা করাতে পারছি না। এই অবস্থায় আমার একটা কাজ না হলে আমার পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে গোটা পরিবারের মৃত্যু ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। সেই কারণে দিদিকে বলো কর্মসূচিতে দেওয়া নম্বরে ফোন করে হয় কাজ নয় সপরিবারে মৃত্যু চেয়েছি আমি। আমার আর অন্য কোনও রাস্তা খোলা নেই।”
মহিলার স্বামীর নাম প্রদীপ মালাকার। বাড়ির কাছেই রাস্তায় দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি সময় থেকে সোনার দোকান চালাতেন তিনি। ২০১৬ সালে নিউ আলিপুরদুয়ার এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তার পর থেকে তিনি শয্যাশায়ী। প্রথমে এই রাজ্যে তার পর হায়দরাবাদ, ওড়িশা ও বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা করিয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু বর্তমানে টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ফলে অসুস্থ্যতা আরও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বামী প্রদীপ মালাকার। তিনি বলেন, “টাকার অভাবে আমি চেক আপে যেতে পারছি না। শরীরে তিনটি বড় অপারেশন হয়েছে। একমাত্র ছোট ছেলের বয়স পাঁচ বছর। স্কুলের টিউশন ফি দিতে পারি না বলে ছেলেকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছি। আমার অবস্থা এমন ছিল না। এখন সরকার সাহায্যের হাত না বাড়ালে মরণ ছাড়া আর আমাদের অন্য কোন উপায় নেই।”
শ্মশানখলার মালাকার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা চার জন। প্রদীপবাবুর মা, ছেলে ও স্ত্রী ও তিনি নিজে। তার শ্বশুরও অসুস্থ। একই পাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন তিনি। তাঁকেও দেখাশোনা করতে হয় এই মালাকার পরিবারকে। বিষয়টি শুনে আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা বলেন, “আমার কাছে ওই পরিবার আসেনি। আমি আপনার কাছ থেকে পরিবারের দুর্দশার কথা শুনলাম। আমার কাছে এলে আমরা সমস্যা সমাধানের অবশ্যই চেষ্টা করব। এত মানুষের সমস্যা সমাধান হচ্ছে। নিশ্চয়ই এই পরিবারেরও সমস্যা সমাধান হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.