নিজস্ব সংবাদদাতা: পেটে অসহ্য যন্ত্রণা৷ চিকিৎসকের নিদানে স্ক্যান করানো হল এক পুরুষ রোগীর৷ স্ক্যান রিপোর্ট এল শরীরে ইউটেরাস ও ওভারিতে নাকি গোলযোগ আছে৷ রিপোর্টে রীতিমতো চিকিৎসকের স্বাক্ষর৷ মঙ্গলবার মৃত্যু হয় ওই রোগীর৷ বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের এমন তাজ্জব রিপোর্ট দেখে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক৷ প্রয়োজনে ওই সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরে৷
দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বিদ্যাপতি অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা অরুণ খাঁ (৫৫) পেটে যন্ত্রণা নিয়ে ১৪ জুন ভর্তি হন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে৷ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক সোমবার এক বেসরকারি প্যাথলজি সেন্টারে পেটে স্ক্যান করা হয় অরুণবাবুর৷ চিকিত্সক নির্দিষ্ট করে ওই সেণ্টারেই স্ক্যান করাতে বলেন বলে অভিযোগ পরিবারের৷ স্ক্যানের রিপোর্ট মঙ্গলবার হাতে পেয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ চিকিৎসকদের৷ রিপোর্ট মতো ৫৫ বছরের পুরুষ অরুণ খাঁয়ের শরীরে ইউটেরাস ও ওভারিতে নাকি সমস্যা রয়েছে৷ সকাল এগারোটা নাগাদ হাসপাতালেই প্রকৃত চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু হয় অরুণবাবুর৷ ততক্ষণে রোগীর পরিবার হাসপাতাল চত্বরেই মারমুখী হয়ে ওঠে৷ ক্ষুব্ধ রোগীর পরিবার অভিযুক্ত ‘আবিষ্কার ডায়াগনিস্ট’ সেন্টার কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালে নিয়ে আসার দাবি জানায়৷ ডেকে পাঠানো হয় তাদের৷ প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন হাসপাতালের সুপার ও অন্যান্য চিকিৎসকরা৷ ‘আবিষ্কার ডায়াগনিস্ট’ সেন্টারের পক্ষে অলোক মিত্র জানান, রিপোর্টে ভুল কিছুই নেই৷ টাইপিং মিস্টেক অনলি৷ এই ‘টাইপিং মিস্টেক’ অনলি নিয়ে সুপার দেবব্রত দাস জানান, অস্বাভাবিক এই রিপোর্ট নিয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে বর্ধমান ও আসানসোলের সুপারকে অভিযোগ জানানো হয়েছে৷ এদিকে অভিযুক্ত প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের আধিকারিক ও কর্মীদের উপর চড়াও হয় রোগীর পরিবার৷ পুলিশ কোনওরকমে উদ্ধার করে তাদের হাসপাতাল চত্বর থেকে সরিয়ে দেয়৷ স্ক্যান রিপোর্টে চিকিত্সক বি এন সিংয়ের স্বাক্ষর রয়েছে৷ পুরুষের পেটে কীভাবে ডিম্বাশয় ও জরায়ু এল সে প্রশ্নে তিনি কোনও উত্তর না দিয়ে চলে যান৷ প্যাথলজিক্যাল সেন্টার সূত্রে জানা গিয়েছে, ফাঁকা প্যাডে সই করে দেন রেডিওলজিস্ট চিকিৎসক৷ পরে সেই প্যাডেই রিপোর্ট লেখে প্যাথলজির কর্মীরা বলে অভিযোগ৷ স্ক্যানের পরামর্শও মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকরা দেরিতে দিয়েছিল বলে পরিবারের অভিযোগ৷ চিকিৎসা বিভ্রাটেই মারা গেলেন দুর্গাপুরের এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অরুণ খাঁ বলে তাঁদের অভিযোগ৷ তাঁরা মৃতের ময়নাতদন্তের দাবি করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মেনে নেয়৷ বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানান, জেলা মুখ্য স্বাস্হ্য আধিকারিককে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তদন্তে গাফিলতির প্রমাণ মিললে বন্ধ করে দেওয়া হবে সেন্টারটি৷ স্ক্যান রিপোর্টে চরম গাফিলতির অভিযোগ স্পষ্ট৷ এবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল সেণ্টারের উপরও নজর দিতে শুরু করবে বলে জানা গিয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.