অভিরূপ দাস: বেঁচে থাকতে তাকে কন্যা জ্ঞানে পুজো করতেন। কোজাগরী পূর্ণিমাতে সারমেয়কে লক্ষ্মী রূপে পুজো! কম প্রশ্ন ওঠেনি। ‘‘কুকুরকে লক্ষ্মী রূপে?’’ সুকন্যা দে-র কথায়, ‘‘ওই কুকুর শব্দটাতে আমার আপত্তি রয়েছে। ওকে আমি মেয়ের মতোই দেখতাম।’’ সেই মেয়ের মৃত্যুতেও বদলালো না অভ্যেস। প্রয়াত সারমেয়র কবরের উপরে তার ছবি রেখেই লক্ষ্মী পুজো সারলেন সুকন্যা দে।
পঞ্চশস্য, আমের শিষ, সব উপকরণই ছিল মজুত। ছিল চার রকমের সন্দেশ। দিয়েছিলেন নিজের হাতে আল্পনা। আদরের পোষ্যর ছবি সামনে রেখে কোজাগরী পূর্ণিমাতে দু’হাত জড়ো করে মন্ত্র পড়েছেন সুকন্যা। বছর বারো আগের কথা। দরকারি কাজে গিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু। সেখানেই বেওয়ারিশ পশুদের আশ্রয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন সারমেয়কে। ভালোবেসে নাম দেন ম্যাগি। সুকন্যার কথায়, ‘‘প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়।’’ বগলদাবা করে সোজা নিয়ে আসেন সল্টলেকের বাড়িতে। এরপর ২০১৩ সাল থেকে শুরু করেন লক্ষ্মীপুজো। ফি বছর পুজোর দিনে সব কিনতেন শুধু প্রতিমা ছাড়া। সল্টলেকের ছিমছাম বাড়িটায় টানা ছ’বছর সারমেয়কে লক্ষ্মী রূপে পুজো করেছেন। পাড়া প্রতিবেশীরা অনেকেই চমকে গিয়েছিলেন। তাতে পাত্তা দেননি সুকন্যা। তাঁর কথায়, ‘‘ওতো আমার নিজের মেয়ের মতোই। সে কারণেই লক্ষ্মীপুজোর দিনে মেয়ের পুজো করতাম।’’
রোগে ভুগে ২০২১ এর মার্চে চলে গিয়েছে সে। ২০২০ তে নীচের চোয়ালে একটা টিউমার ধরা পড়ে। পশু চিকিৎসক দেখিয়েছিলেন সুকন্যা। তাঁর কথায়, ‘‘অপারেশন করিয়েছিলাম। কিন্তু অস্ত্রোপচারটা ভুল হয়েছিল।’’ চেষ্টার কসুর করেননি। ম্যাগিকে ছুটে নিয়ে গিয়েছিলেন চেন্নাইতে। সেখানে ভর্তি করা হয়েছিল পশু হাসপাতালে। কিন্তু শারীরিক ধকল সহ্য করতে পারেনি ম্যাগি। ২০২১ এর মার্চে চলে যায় সে। এরপর মধ্যমগ্রামে তাকে কবর দেয় সুকন্যা। সেখানেই লক্ষ্মীপুজোর দিনে জলল ধুপ ধুনো। হল মন্ত্রোচ্বারণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.