দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: রেললাইন ধরে মা এবং বোনকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটছিলেন যুবক। বালিহল্টের কাছে রেলের ইঞ্জিনের ধাক্কা। গুরুতর জখম অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়ে রইলেন মা এবং বোন। সাহায্য চেয়েও পেলেন না ওই যুবক। বেশ কিছুক্ষণ পর একজন নার্স ও টোটোচালকের তৎপরতায় দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ততক্ষণে সব শেষ। প্রাণহানি হয় মা, বোন দু’জনেরই। চোখের সামনে দুর্ঘটনায় মা এবং বোনের মৃত্যু মানতে পারছেন না যুবক।
পাসপোর্ট অফিসে ঠিকাকর্মীর কাছে কাজ করতেন বাগুইআটির বাসিন্দা ঋত্বিক সিংহ। তবে লকডাউনে নেই সেই কাজ। সংসারে তীব্র অর্থাভাব। তাই বাধ্য হয়ে সামান্য অর্থ ঋণ করে দিনকয়েক সংসার চালাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই অনুযায়ী শুক্রবার সকালে এক ব্যক্তির থেকে কিছু টাকা নিতে মা, বোনকে সঙ্গে নিয়ে বালি হল্টের কাছে যান ওই যুবক। তবে সেই ব্যক্তির দেখা পাননি। ফোন করেন ঋত্বিক। ওই ব্যক্তি জানান বালিখালে চলে আসতে, সেখানেই দেখা হয়ে যাবে।
রাস্তায় যানচলাচল তুলনায় অনেক কম। হাতে টাকাও নেই। তাই বাধ্য হয়ে রেললাইন ধরে হাঁটতে শুরু করেন তিনজন। বালি হল্টের কাছে উলটো দিক থেকে আসা রেলের একটি ইঞ্জিন সজোরে মা এবং বোনকে ধাক্কা মারে। বহু দূরে ছিটকে পড়েন তাঁরা। কোনওক্রমে লাইন থেকে সরে গেলে প্রাণরক্ষা হয় ঋত্বিকের। বিপদে পড়ে আশপাশের লোকজনকে সাহায্যের জন্য ডাকতে থাকেন ওই যুবক। তবে অভিযোগ, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি কেউ।
সেই সময় ঋত্বিকের পাশে এসে দাঁড়ান কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের নার্স রিনা সাউ। তিনি প্রাথমিকভাবে ওই যুবকের মা এবং বোনের শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। তাতেই বুঝতে পারেন ঋত্বিকের বোন প্রিয়াঙ্কা মারা গিয়েছেন। তবু নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিকি বাল্মীকি নামে এক টোটোচালকের তৎপরতায় তাঁকে বেলুড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মা পম্পা সিংহকে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান তিনিও। ঋত্বিকেরও অল্পবিস্তর চোট লেগেছে। চিকিৎসা হয় তাঁরও। চোখের সামনে মা এবং বোনের মৃত্যু মানতে পারছেন না তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.