ছবিটি প্রতীকী
সৌরভ মাঝি, বর্ধমান: বাড়িতে ঢুকে উৎপাত করত। সেই অপরাধে সন্তান প্রসবের সময় একটি কুকুরের শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হল। এর ফলে মায়ের পেট থেকে বেরিয়েই তিনটি কুকুরছানা জীবন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে মারা যায়। তখনও মা কুকুরের পেটে ছিল আরও একটি বাচ্চা। সেই অবস্থাতেই দগ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে সে। খবর পেয়ে পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা গিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু, তাকে আর বাঁচানো যায়নি। এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী রইল বর্ধমানের গোদা এলাকার খোন্দকার পাড়া। মঙ্গলবার স্থানীয় পশুপ্রেমী সংগঠনের তরফে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে পুলিশ এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। বর্ধমান পশু হাসপাতালে কুকুরটির ময়নাতদন্তও করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত আসিয়া বিবিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনাটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরেই এলাকা থেকে চম্পট দিয়েছে সে। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই নিন্দার ঝড় উঠেছে বর্ধমান শহরজুড়ে।
কয়েক মাস কলকাতায় এনআরএস হাসপাতালে কুকুরছানাদের পিটিয়ে খুন করার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। সম্প্রতি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। কিছুদিন আগে বর্ধমানেও কুকুরকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় পুলিশে নালিশ করা হয়েছিল। কিন্তু, নৃশংসতায় অতীতের সব ঘটনাকেই যেন পিছনে ফেলে দিয়েছে বর্ধমানের গোদার ঘটনা। প্রসবের সময়ে কুকুর ও তার সদ্যোজাত সন্তানদের এইভাবে জীবন্ত দগ্ধ করার ঘটনা যে কোনও মানুষ ঘটাতে পারে, তা ভাবতেই পারছেন না বর্ধমানের বাসিন্দারা।
স্থানীয় পশু প্রেমী সংগঠনের তরফে অর্ণব দাস পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তিনি জানিয়েছেন, গোদার খোন্দকার পাড়ার অন্য বাসিন্দাদের মাধ্যমেই এই নৃশংস ঘটনার খবর পান তিনি। গত রবিবার, ৩ নভেম্বর বিকেলে আসিয়া বিবি নামে ওই মহিলা গর্ভবতী কুকুরটির গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পশুপ্রেমী সংগঠনের কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন তিনটি কুকুরের ছানা পুড়ে গিয়েছে। আর মা কুকুরটি দগ্ধ অবস্থায় ছটফট করছে। তাঁরা চিকিৎসা শুরু করলেও কুকুরটিকে বাঁচনো যায়নি। সোমবার বিকেলের সেটির মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার মৃত কুকুরটিকে নিয়ে থানায় যান তাঁরা। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। তারপর বর্ধমানের জেলা পশু হাসপাতালে মৃত কুকুরের ময়নাতদন্ত হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে পশু চিকিৎসক বাসুদেব ঘোষ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কুকুরটির শরীরের পোড়ার চিহ্ন রয়েছে বলেই মনে হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে কী কারণে মৃত্যু হয়েছে।’ অভিযোগ পেয়ে পুলিশ আসিয়া বিবির বাড়িতে গেলেও তার সন্ধান পায়নি। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। বাড়িতে অন্য কারওর দেখাও মেলেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.