সৌরভ মাঝি, বর্ধমান: সন্তান প্রসবের সময় মা-কুকুর ও তার সন্তানদের পুড়িয়ে মারায় অভিযুক্ত মহিলাকে গ্রেপ্তার করল বর্ধমান থানার পুলিশ। মঙ্গলবার বর্ধমানের গোদার খোন্দকার পাড়ার বাসিন্দা আসিয়া বিবি ওরফে আসিয়া খাতুনকে নামে ওই মহিলাকে নবাবহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এদিন ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করে পুলিশ। ধৃত যাতে জামিন না পায় তদন্তকারী অফিসার অনুপ দে সেই আবেদন জানান আদালতে। সাম্প্রতিককালে পশুদের উপর নির্যাতনে বা মেরে ফেলার ঘটনায় এই প্রথম কেউ গ্রেপ্তার হল বর্ধমানে। এর আগে কলকাতায় এনআরএস হাসপাতালে কুকুরছানাদের পিটিয়ে মারার ঘটনায় দুই নার্স গ্রেপ্তার হয়েছিলনে। সেই মামলায় পুলিশ আদালতে চার্জশিটও দিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্য অর্ণব দাস গত ৫ নভেম্বর বর্ধমান থানায় আসিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগ, গত ৩ নভেম্বর বিকেলের দিকে একটি কুকুর সন্তান প্রসব করছিল। সেই সময় আসিয়া বিবিকে ওই কুকুর ও তার সদ্যোজাত তিনটি ছানার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতে তিনটি কুকুর ছানা ও পেটের ভিতরে বাচ্চা থাকায় অবস্থায় মা-কুকুরটিও দগ্ধ হয়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা সেখানে ছুটে যান। মা কুকুরটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সেটিকেও বাঁচানো যায়নি। পরদিন বিকেলে মৃত্যু হয় মা কুকুরটিরও। এরপরই অর্ণবরা পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশে অভিযোগ জানানোর পর বর্ধমানের পশু হাসপাতালে ময়নাতদন্তও হয়। সেখানকার চিকিৎসা জানান, প্রাথমিকভাবে ওই কুকুরের গায়ে আগুন লাগানোর চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।
এই পাশবিক ঘটনার প্রতিবাদে সরব সংবেদনশীল মানুষজন। নারকীয় এই ঘটনা যিনি ঘটিযেছেন তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু মানুষ পাশবিক ঘটনার প্রতিবাদ জানান। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্তে নামে বর্ধমান থানার পুলিশ। তদন্তভার পান সাব ইনস্পেক্টর অনুপ দে। তিনি ঘটনাস্থলে তদন্তে যান। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্তে পুলিশ ঘটনার সতত্য জানতে পারে। তার ভিত্তিতে এদিন সকালে সূত্রের মাধ্যমে খবর পেয়ে আসিকে নবাবহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এদিন আদালতে পেশ করার আগে আসিয়া বিবি অভিযোগ অস্বীকার করে। তার দাবি, সে ইচ্ছা করে পুড়িয়ে মারেনি। সে নাকি জানতই না কুকুরটির পেটে বাচ্চা রয়েছে। কুকুরটি মুরগির ঘরে ঢুকেছিল। কিন্তু তাড়ানো হলেও যাচ্ছিল না। তাই সেই ঘরের মুখে আগুন ধরিয়ে দেয় আসিয়া, যাতে কুকরটি ভয়ে পালিয়ে যায়। আগুন দেওয়ার পরেই সে নার্সিংহোমে আয়ার কাজে চলে যান। যদিও স্থানীয়রা তা মানতে নারাজ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশের এই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অনেকে। দময়ন্তী সেন নামে এক পশুপ্রেমী লিখেছেন, “…বর্ধমান পুলিশ অনেক অনেক স্যালুট।” আবার পশুপ্রেমীরা বিষয়টি পুলিশের গোচরে আনায় তাঁদেরও অনেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.