প্রতীকী ছবি
চঞ্চল প্রধান ও ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: আর জি করের নৃশংসতার মাঝেই আগেই ফের পাশবিক অত্যাচারের শিকার আরও এক মহিলা। অভিযোগ, নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে অর্ধনগ্ন অবস্থায় এক গৃহবধূকে ৩০০ মিটার রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জল চাইলে, গৃহবধূর মুখে প্রস্রাব করার হুমকিও দেওয়া হয় বলেও দাবি। তার আগে দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগও উঠেছে। গোটা ঘটনায় কাঠগড়ায় বিজেপি। এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার দুপুরে নন্দীগ্রাম যাচ্ছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল।
নির্যাতিতা মহিলা তৃণমূল কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিতা। তাঁর প্রতিবেশী বিজেপি সমর্থক। জানা গিয়েছে, জল নিকাশি নিয়ে ওই মহিলার পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশীর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ছিল। দুই পরিবারের অশান্তির মাঝে বিজেপির লোকজন খবরদারি করতে শুরু করে বলে অভিযোগ। শুক্রবার রাতে মহিলার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। সেই সুযোগে বিজেপির লোকজন বাড়িতে দরজা ভেঙে গৃহবধুর উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে বেদম মারধর করা হয়। পিঠ-হাত-পা-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কালশিটে দাগ পড়ে গিয়েছে। এমনকী, অর্ধনগ্ন অবস্থায় ৩০০ মিটার রাস্তায় তাঁকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জল চাইলে, গৃহবধূর মুখে প্রস্রাব করার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রমাণ লোপাটের জন্য বাড়ির সিসি ক্যামেরাও ভেঙে ফেলেছেন তাণ্ডবকারীরা। জখম গৃহবধূকে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিজেপির স্থানীয় বুথ সভাপতি শম্ভু দাসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনাস্থলে রয়েছে পুলিশের কড়া টহলদারি।
এই ঘটনায় বিজেপির নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লক আহ্বায়ক অভিজিৎ মাইতি জানিয়েছেন,”এটা পারিবারিক ঘটনা । তাতে রাজনৈতিক রঙ চড়িয়ে তৃণমূল ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।” যদিও ঘটনাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলে দাবি প্রহৃত গৃহবধূর স্বামী। তিনি বলেন, “আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন বিজেপির প্রতি ঘৃণা থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। বিজেপির নিয়মশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। তা দেখেই আমি দলটা ছেড়েছি। তৃণমূলের হয়ে এলাকায় সংগঠন করি বলে ওরা ক্ষুব্ধ। আমারও বর্তমানে আমার স্ত্রীর উপরে ওঁরা তাই প্রতিশোধ নিল। এলাকার মানুষ সবটাই জানে। আমি দোষীদের শাস্তি চাই।”
এই ঘটনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল বলে তৃণমূলের দাবি। এ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জানিয়েছেন,”গৃহবধূ ও তাঁর পরিবারের লোকজন তৃণমূল করে বলে বিজেপির গায়ে জ্বালা। গৃহবধূর স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। সেই সুযোগ নিয়ে বিজেপির লোকজন বাড়ির দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে মহিলাকে বেদম প্রহার করেছে। তাতেও তাদের রাগ মেটেনি। অর্ধনগ্ন অবস্থায় বাড়ি থেকে ৩০০ মিটার দূর পর্যন্ত রাস্তায় টেনে হিচরে নিয়ে গিয়েছে। এই বর্বর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানাই । সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত দোষীদের চিহ্নিত করে কঠিন সাজা হোক।” ঘটনা সম্পর্কে নন্দীগ্রাম থানার আইসি অনুপম মণ্ডল জানিয়েছেন,”গোকুলনগরের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছ । বাকিদের খোঁজ চলছে।”
ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ও নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে রবিবার নন্দীগ্রামে যাচ্ছে তৃণমূলের ৮ প্রতিনিধি। তালিকায় রয়েছেন শিউলি সাহা, বীরবাহা হাঁসদা, সায়নী ঘোষ, উত্তরা সিং, মমতাবালা ঠাকুর, দোলা সেন, দেবাংশু ভট্টাচার্য এবং কুণাল ঘোষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.