রাহুল চক্রবর্তী: নরেন্দ্র মোদির কাছে গিয়েছেন। আবারও যাবেন। কেন্দ্রের মন্ত্রীদের কাছেও আবারও যাবেন,স্পষ্ট বক্তব্য অধীর চৌধুরির। তবে সেটা এলাকার উন্নয়নের জন্যই। দলবদলের কারণ খুঁজতে যাওয়া অনর্থক বলে মন্তব্য বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদের।
লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়েছে ২৩ মে। তার সাত দিনের মধ্যেই চারজন বিধায়ক যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তৃণমূলের ‘হাতছাড়া’ চারটি পুরসভা। দিন কয়েকের মধ্যে আরও অনেক বিধায়ক ও নেতৃত্ব বিজেপিতে শামিল হচ্ছেন, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। আর এই প্রেক্ষাপটে অধীর চৌধুরিকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলা বিজেপি সভাপতি গৌরীশংকর ঘোষ। বলা ভাল, ভোটপর্ব শেষ হতেই বিজেপির উত্থানে দলবদলের হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে বিভিন্ন মহলে জল্পনা ছড়িয়েছিল অধীর বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। ফল প্রকাশের পর দেশে কংগ্রেসের খারাপ ফল দেখে সেই সম্ভাবনাকে উসকে দিয়েছেন অনেকই। কিন্তু অধীর চৌধুরির স্পষ্ট বক্তব্য, “ভোটের আগেও আমার বিজেপিতে যোগদান নিয়ে অনেক গল্প হয়েছে। এখনও হচ্ছে। ওসবকে আমি পাত্তা দিই না। যে যার ইচ্ছামতো গল্প বানাক।”
তবে এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে যাবেন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধীর। বলেছেন, “আমার এলাকার উন্নয়নের জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, সবার কাছে যেতে পারি। এটাই গণতন্ত্র। নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির মন্ত্রীদের কাছে গিয়েছি। আগামিদিনেও যাব। শুধুমাত্র সেটা এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের জন্য।” অধীর এটা মনে করেন, সাংসদ হিসাবে প্রধানমন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রের মন্ত্রীদের কাছে যাওয়াটা অন্যায় নয়। বরং না যাওয়াটাই অন্যায়ের। এমপি-ল্যাডের টাকা খরচ করতে দেওয়া হয়নি বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন অধীর চৌধুরি।
মুর্শিদাবাদ জেলায় অধীর চৌধুরির লড়াই-সংগ্রাম সবাই জানে। এবারের ভোটেও তাঁকে দিনভর যেভাবে ছুটতে হয়েছে, তা সবাই দেখেছেন। তৃণমূল এবারও তাঁকে হারাতে পারেনি। তবে অধীরের এবারের লড়াই যে কঠিন ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বহরমপুরে অধীর জিতলেও মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর আসনে কংগ্রেস প্রার্থীরা জিততে পারেননি। আবার কান্দি বিধানসভার উপনির্বাচনে শুধু কংগ্রেস জিতেছে। কিন্তু হাতছাড়া হয়েছে নওদা। ফলে সবমিলিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেসের আগামী লড়াই বেশ কঠিন।
এই অবস্থায় দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করতে অধীরকে দলে টানতে চাইছে বিজেপি। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণ জোয়ারদার বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলায় বিজেপির ভাল সংগঠকের প্রয়োজন। অধীর চৌধুরি দলে এলে বিজেপির লাভ হবে।” কিন্তু অধীরের কাছে বিজেপি কোনও প্রস্তাব পাঠায়নি। আর প্রস্তাব এলেও বিজেপিতে যোগদানের কোনও প্রশ্ন নেই বলে একবাক্যে জানিয়ে দিয়েছেন অধীর চৌধুরি। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদানকে ‘পোয়েটিক জাসটিস’ আখ্যা দিয়েছেন।
রাজ্যে গেরুয়া পতাকার জয়জয়কারে উজ্জীবিত পদ্ম শিবির। লোকসভার সাফল্যে সারা রাজ্যে বিস্তার লাভ করতে চাইছে বিজেপি। মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা আসনের একটিতে জিতেছে কংগ্রেস, দু’টিতে তৃণমূল। তবে ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলছে ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু জেলার বিজেপি দল পরিচালনার জন্য দক্ষ সেনাপতির অভাব। এই অবস্থায় অধীরকে দলে নিয়ে জেলায় বিজেপি শক্তিশালী হতে চাইছে। ২৩ মে ফল বেরনোর পরেও উচ্ছ্বাস ছিল না বহরমপুর সাংসদের মুখে। ঘনিষ্ঠ মহলে অধীর চৌধুরি বলেছিলেন, “বিরোধীদের মিথ্যা প্রচারে মুর্শিদাবাদ জেলার একাংশের মানুষ আমাকে সাম্প্রদায়িক হিসাবে ভুল বুঝেছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.