বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: বিমল গুরুং কি পারবেন ‘কিং মেকার’-এর ক্যারিশমা ধরে রাখতে? জন বারলা কি শেষ পর্যন্ত গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীকে জেতাতে চা বলয়ে নিজের প্রভাব খাটিয়েছেন? অনন্ত মহারাজ কী ভূমিকা নিলেন? পারবেন কি উদয়ন গুহ কোচবিহার এবং গৌতম দেব দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি আসন ‘দিদি’-কে উপহার দিতে? আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলতে চলেছে মঙ্গলবার। টানটান উত্তেজনায় ভরা ফলাফলে ওই নেতাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও লেখা হতে পারে এদিন তা নিয়েই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা।
কার্যত এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরের আসনগুলোর ফলাফল নিয়ে যতটা না চিন্তা, উদ্বেগ প্রার্থীদের তার অনেক বেশি কিছু নেতৃত্বের বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কারণ, তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চলেছে আজকের ফলাফল। যেমন, দার্জিলিং লোকসভা আসনে প্রার্থী না হয়েও আজ একরকম অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং। ১৯৮৬ সালে লোকসভা কেন্দ্রটি সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল সুভাষ ঘিসিংয়ের নেতৃত্বে গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের সুবাদে। এর পর ২০০৭ সালে সুবাস ঘিসিংকে টপকে উত্থান ঘটে বিমল গুরুংয়ের। ঘিষিংয়ের পর তিনি হয়ে ওঠেন পাহাড়ের শেষ কথা। ২০০৯ থেকে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির চমকপ্রদ ফলাফলের নেপথ্যের নায়ক ছিলেন গুরুং। পাহাড়ে একচ্ছত্র আধিপত্যের ক্যারিশমা দেখিয়ে তিনি দিল্লির নজরে এসেছেন। যদিও এর পর ছবি অনেক পালটেছে। ১০৪ দিনের ধর্মঘট, ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের পরিণতিতে গুরুংয়ের আত্মগোপনের পর অনীত থাপার উত্থানের হাত ধরে পাহাড়ে নতুন রাজনৈতিক ধারার সূত্রপাত ঘটে। একের পর এক স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের নির্বাচনে পরাজয়ের পর গুরুং-সহ জিএনএলএফ কোণঠাসা হয়। এবার নির্বাচনেও পাহাড়ে বিজেপির একমাত্র ভরসা সেই গুরুং। অন্যদিকে তৃণমূলের ভরসা ছিলেন অনীত থাপা। ফলাফল থেকে স্পষ্ট হবে গুরুং তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছেন কি না। রাজনৈতিক মহলের মতে দার্জিলিং আসন বিজেপি জয়লাভ করলে গুরুংয়ের রাজনৈতিক পুনর্বাসন ঘটবে। পরাজিত হলে তিনি চিরতরে অপ্রাসঙ্গিক হবেন।
একইভাবে চা বলয়ের দুটি আসন আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে বিজেপির জয় পরাজয়ের উপরে নির্ভর করছে আদিবাসী নেতা জন বার্লার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে প্রার্থী পরিবর্তনের পর তিনি রীতিমতো বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। নির্বাচনী প্রচারেও তার দেখা মেলেনি। যদিও পরে দিল্লির নেতাদের ধমকে চুপ করে যান। আশ্বাস দেন দলীয় প্রার্থী মনোজ টিগগা ও জয়ন্ত রায়ের হয়ে প্রচার করবেন। তিনি কতটা দলের হয়ে অথবা বিরোধিতা করে প্রচার করেছে আজ ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট হবে বলেই রাজনৈতিক মহলের দাবি। দলের প্রার্থী পরাজিত হলে গুরুংয়ের মতো তাঁকেও প্রাসঙ্গিকতা হারাতে হতে পারে। এছাড়াও রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে আলিপুরদুয়ার আসনে ঘাসফুলের জয়-পরাজয়ের উপর এলাকার এক ডাকসাইটের তৃণমূল নেতার অস্তিত্বের সওয়ালও জড়িয়ে রয়েছে। দল পরাজিত হলে উঠতেই পারে অন্তর্ঘাতের প্রসঙ্গ।
এদিকে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি লোকসভা নির্বাচনের জয় পরাজয়ের উপরে তৃণমূল নেতা গৌতম দেবের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। এই দুটি আসনের ফলাফল তাদের কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং। কারণ, গৌতমবাবু ওই দুটি আসন দলীয় নেত্রীকে উপহার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। সেকথা প্রকাশ্যে বলেওছেন। তাই আসন দুটির ফলাফল একদিকে যেমন প্রমাণ করবে দলের সাংগঠনিক শক্তি এবং সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটে মহকুমা পরিষদ, শিলিগুড়ি পুরনিগম জয়ের দাবি। অন্যদিকে গৌতম দেবের নেতৃত্বের দক্ষতার। একইভাবে এবার চরম অগ্নি পরীক্ষার মুখোমুখি রাজ্যের মন্ত্রী দিনহাটার উদয়ন গুহ। সেখানে নিশীথ প্রামাণিকের জয় পরাজয়ের উপর তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে। নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক সভায় সেই আভাস দিয়ে রেখেছিলেন খোদ তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। উদয়নবাবু ছাড়াও এই আসনে পদ্ম শিবিরের জয় পরাজয় আরও একজনের রাজনৈতিক গুরুত্ব, ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তিনি অবশ্যই অনন্ত মহারাজ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.