নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: এবার মানুয়া কাণ্ডের ছায়া পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে। বন্ধুর স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের হাতছানি। সেই প্রেমকে কাছে পেতে বন্ধুকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা। তাতে সায় মিলেছে বিবাহিত প্রেমিকারও। ব্যাস, খুন হতে হল পেশায় নির্মণ শ্রমিক গোবর্ধন সামন্তকে (৩৫)। সোমবার নন্দকুমার থানার রাজনগর এলাকার এই ঘটনা প্রকাশ্যে এলে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্ত স্ত্রী ও তার প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে নন্দকুমার থানার পুলিশ। পুলিশের জেরায় নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকারও করে নিয়েছে তারা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর ১২ আগে নন্দকুমার থানারই রাধানগরচক এলাকার বাসিন্দা উমা সামন্তের বিয়ে হয় গোবর্ধনের সঙ্গে। তাদের বছর ১০ ও ৭ বছরের পুত্র ও কন্যা সন্তান রয়েছে। অপর দিকে পাশের রাজনগর এলাকার এক যুবক সমীর বর্মনের সঙ্গে কর্মসূত্রে আলাপ হয় গোবর্ধনের। বন্ধুকে মাঝে মধ্যেই বাড়িতে নিয়ে আসতেন গোবর্ধন। সেই সূত্রে গোবর্ধনের স্ত্রী উমার সঙ্গে আলাপ, পরে প্রেম জমে যায় সমীরের। একদিন তা প্রকাশ্যেও আসে।
এদিকে এই নিয়ে অশান্তি বাড়ছিল গোবর্ধন ও উমার মধ্যে। বন্ধুত্বের খাতিরে সমীরকে কিছু বলেননি গোবর্ধন। বিবাহ বহির্ভূত এই সম্পর্ক থেকে স্ত্রীকে বেরিয়ে আসার জন্য চাপ দিতে থাকেন তিনি। মদ্যপ অবস্থায় প্রায়শই স্ত্রীকে বেধড়ক করতেন বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি তাদের মধ্যে এই অশান্তি একবারে চরমে উঠে। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পরিত্রানের জন্য তাঁকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় উমা। উমার কথামতো পথের কাঁটা সরিয়ে ফেলতে বন্ধুকে খুনের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে সমীর।
পরিকল্পনা মতোই রবিবার একই সঙ্গে রাজনগর এলাকায় কাজে গিয়েছিলেন গোবর্ধন ও সমীর। সঙ্গে ছিলেন গোবর্ধনের দাদা ক্ষুদিরামও। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ কাজ সেরে বাড়ি ফিরে আসেন তিনজন। ফের সন্ধেয় স্থানীয় বাজার এলাকায় তাদের দেখা হয়। স্থানীয় কালীর হাট এলাকায় তিনজনই মদ খান। এরপর রাত আটটা নাগাদ মদ খেয়ে ক্ষুদিরাম বাড়ি ফিরলেও ওই দুই বন্ধু আর বাড়ি ফেরেনি বলে অভিযোগ। বন্ধুকে নিয়ে আরও মদ খাওয়াবে বলে ডেকে নিয়ে যায় সমীর। এরপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও আর রাতে বাড়ি ফেরনি গোবর্ধন। গতকাল সকালে স্থানীয় রাজনগর স্কুলের পেছনে ফাঁকা জায়গা থেকে গোবর্ধনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয় মদের বোতল ও গ্লাস।
এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনার পর খুনের অভিযোগ জানিয়ে নন্দকুমার থানার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন গোবর্ধনের দাদা ক্ষুদিরাম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অবৈধ সম্পর্কের জেরে পথের কাঁটা সরাতেই ভাইকে এমন পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমে উমা এবং সমীর ২ জনকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তমলুক মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুরজিৎ মণ্ডল জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.