অভিরূপ দাস: জীবন থেকে ‘জ্যোৎস্না’ কেড়ে নিয়েছে এডিস মশা। হুল ঠেকাতে গাঁটের কড়ি খরচ করে জাল কিনছেন স্বপন। মশারি বিলোচ্ছেন ডেঙ্গু কবলিত এলাকায়।
গত বছরের কথা। হুগলির মগরার স্বপন সাধুখাঁর স্ত্রী মারা যান ডেঙ্গুতে। তারপর থেকেই শপথ নিয়েছেন, আর কারও জীবনে স্বজন হারানোর আঁধার নামতে দেবেন না। সহধর্মিনীর মৃত্যুর এক বছর পরে তাই অন্যরকম স্মৃতিচারণ দেখল হুগলির কামারপাড়া। মশারি নিয়ে পথে নামলেন স্বপন সাধুখাঁ। ডেঙ্গু কবলিত এলাকার কামারপাড়া হাইস্কুলে বিলোলেন এডিস আটকানোর জাল। ষাটজন ছাত্রকে মশারি উপহার দিয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালে সিস্ট অস্ত্রোপচার করতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হয়েছিলেন বছর আটত্রিশের জ্যোৎস্না। অপারেশন মেটে নির্বিঘ্নেই। তবে অভিযোগ, অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সময়ে হাসপাতালের বেডেই তাঁকে মশা কামড়ায়। স্বপনের কথায়, অপারেশনের পর ভালই ছিল। বাড়িতে আনার সময় দেখতে পাই, গায়ের বেশ কিছু জায়গায় ব়্যাশ বেরিয়েছে। চিকিৎসকরা প্রথমটায় বুঝতে পারেননি। ৫ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে ছুটি হয়ে যায়। ৬ সেপ্টেম্বর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ১০ তারিখ থেকে ধুম জ্বর। তড়িঘড়ি ফের নিয়ে যাওয়া হয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যায় প্লেটলেট নেমে গিয়েছে তলানিতে। চিকিৎসকদের হাজারো চেষ্টার পরেও ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জ্যোৎস্না। ডেথ সার্টিফিকেটের লেখাটা আজও চোখে ভাসে স্বপনের। ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।’
মাত্র ৩৮ বছর বয়সে স্ত্রীর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি স্বপন। তাঁর কথায়, “শ্মশানে স্ত্রীকে পুড়িয়ে বাড়িতে আসার পথেই স্থির করে নিই, আমার লড়াই শুরু হবে মশাদের বিরুদ্ধে। এমন একটা অসুখকে আটকাতেই হবে।” এরপর থেকে কীভাবে ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী মশার লার্ভা নষ্ট করা যায়, তা নিয়েই চিন্তায় মশগুল তিনি। হুগলির মগরায় নিজের বাড়ির আশপাশে তো বটেই, গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে অন্য ডেঙ্গু কবলিত এলাকাতেও ব্লিচিং ছড়ান। কিছু করার তাগিদে স্ত্রীর স্মৃতিতে খুলেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। স্ত্রীর মৃত্যুর বর্ষপূর্তিতে সেই সংস্থার হয়েই মশারি তুলে দিয়েছেন কামারপাড়া হাইস্কুলের ছাত্রদের হাতে। স্বপন জানিয়েছেন, “প্রতিটা মৃত্যু আমাকে জ্যোৎস্নার কথা মনে করিয়ে দেয়। যেভাবে হোক ডেঙ্গুতে লাগাম পড়াতে হবে। সেই কারণেই মশারি উপহার।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.