ছবি: প্রতীকী
ধীমান রায়, কাটোয়া: এ যেন মনুয়াকাণ্ডেরই পুনরাবৃত্তি। প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে স্বামীকে খুনের অভিযোগ স্ত্রীর বিরুদ্ধে। কাটোয়ার জগদানন্দপুরে এমন ঠান্ডা মাথার খুনের পর মৃত স্বামীর পাশেই শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোলেন স্ত্রী। শেষ রক্ষা হয়নি যদিও। সমস্ত ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে যাওয়ায় ওই মহিলা আপাতত শ্রীঘরে। কাটোয়া মহকুমা আদালতের বিচারক তাঁকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার জগদানন্দপুর গ্রামে মাধব বাগ নামে জনমজুরের রহস্য মৃত্যুর তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ছেলে, মেয়ে এবং স্বামীকে রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল গৃহবধূ সোমা বাগ। সকলেই যখন ঘুমে আছন্ন, গভীর রাতে প্রেমিককে ফোন করে ডেকে পাঠায় সে। তারপর দু’জন মিলে নাইলনের মশারি স্বামীর গলায় পেঁচিয়ে খুন করে। তারপর স্বামীর মৃতদেহের পাশে শুয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সোমা। শুক্রবার সকালে ঘর থেকে মাধব বাগের দেহ উদ্ধারের পরেই পুলিশ আটক করে নিহতের স্ত্রী সোমা বাগকে। শুক্রবার রাতে নিহতের দাদা গদাই বাগ সোমাদেবী ও তার প্রেমিক প্রতিবেশী নারায়ণ ওরফে নারান প্রধানের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় সোমা বাগকে। তবে পলাতক প্রেমিক নারায়ণ।
শুক্রবার ভোরে কাজে যাওয়ার জন্য দাদাকে ঘুম থেকে ডাকতে যান মাধবের ভাই যাদব। দেখতে পান, ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে মাধবের দেহ। স্বামীর মৃতদেহের পাশেই শুয়েছিল স্ত্রী সোমা। আর ওই ঘরের মধ্যেই খাটে শুয়েছিল মাধবের ছেলে ব্রজেশ এবং মেয়ে রিঙ্কু। মাধববাবুর মৃতদেহের গলায় দাগ দেখেই পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়, তাঁকে খুন করা হয়েছে। নিহতের দাদা গদাই বাগ বলেন, “বছর তিনেক ধরে আমার ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে প্রতিবেশী নারান প্রধানের সম্পর্ক ছিল। ভাই জানত। আমরাও জানতাম। কিন্তু বৌমা হুমকি দিত, কিছু বললে বধূ নির্যাতনের মামলা করবে বাড়ির সকলের বিরুদ্ধে। তাই মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু এমন করতে পারে ভাবিনি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে বয়সে বছর দুয়েকের ছোট প্রতিবেশী যুবক নারায়ণের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল সোমা। দু’জনে প্রায়ই একান্তে মিলিত হত। পাড়ার অনেকেই জানতেন। পুলিশের জেরায় ধৃত মহিলা বৃহস্পতিবার রাতের সমস্ত ঘটনাই খুলে বলেছে। এও জানায়, নাইলনের মশারি মাধবের গলায় পেঁচিয়ে ধরে প্রেমিক নারায়ণ। ছটফট করলে সোমা স্বামীর পা দুটি ধরে থাকেন। মাধবের দেহ স্থির হয়ে গেলে ঘর থেকে চুপিচুপি বেরিয়ে পালায় নারায়ণ। সোমা ফের শুয়ে পড়েন নিহত স্বামীর পাশে। পুলিশ ওই ঘর থেকে মশারিটি উদ্ধার করেছে। পলাতক নারানের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.