রাজ্য বিজেপি দপ্তরে মিঠুন চক্রবর্তী
স্টাফ রিপোর্টার: বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর রোড শোয়ে ভিড় হলেও ভোটবাক্সে কেন প্রভাব পড়ল না? গত এক বছরে একের পর এক ভোটে বাংলায় কেন শুধুই হারছে বিজেপি (BJP)? হতাশাগ্রস্ত হয়ে এমনই বিব্রতকর প্রশ্ন করে রাজ্য বিজেপি নেতাদের প্রবল অস্বস্তিতে ফেললেন বিধানসভা ভোটে পদ্ম শিবিরের হয়ে প্রচারে নামা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। এরপরই অবশ্য আগামী দিনে কীভাবে দলের সমর্থন বৃদ্ধি করা উচিত তা নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে পরামর্শ দেন ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবির নায়ক। তিনি বলেন, “বড় জনসভার পরিবর্তে দলের সংগঠন বৃদ্ধিতে ছোট গ্রুপ বৈঠক করুন।”
মিঠুনের এমন প্রশ্ন ঘিরে দলের একাংশ অবশ্য তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। তাঁদের পালটা অভিযোগ, “উনি পর্দার মানুষ, একসময় জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। তাই ওঁকে দেখতে রাস্তায় ভিড় হলেও তা ভোটের বাক্সে নিয়ে যাওয়ার সংগঠন এখনও তৈরি হয়নি বিজেপির। আর উনি মাঠে ময়দানের রাজনীতির লড়াইয়ের কী বুঝবেন?”
একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বোন’ বলে তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় সাংসদ হলেও ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে বাংলায় পদ্মশিবিরের হয়ে ভোটপ্রচারে অংশ নেন মিঠুন। প্রচারে তাঁর রোড শোয়ে রাস্তার ধারে কিছু মানুষের ভিড় দেখা গেলেও বাস্তবে ভোটবাক্সে সেই সমর্থনের ছিটেফোঁটা দেখা যায়নি। ‘ইস বার ২০০ পার’ স্লোগান দিয়ে মাত্র ৭৭ আসনে থেমে গিয়েছিল রাজ্য বিজেপি। উলটোদিকে তৃণমূল ২০১৬-র চেয়েও আসন বাড়িয়ে ২১৩টি সিট পেয়েছিল। বস্তুত হতাশ মিঠুন সেই ফলের পর একবছরেরও বেশি সময় আর বাংলামুখো হননি। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের উপর ভরসা করে গত একবছরে যতগুলি উপনির্বাচন ও পুরভোট হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই গোহারা হয়েছে বিজেপি। হারের ধাক্কায় দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের মনোবল এখন এতটাই তলানিতে চলে গিয়েছে যে রাজ্য নেতৃত্বের উপর ভরসা না করে বাংলায় মাঝে মধ্যে মিঠুনকেও গেরুয়া শিবিরে সময় দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
বস্তুত এই কারণে এবার শুটিং করতে এসেও সোমবার বিজেপি দপ্তরে গিয়েছিলেন ‘এমএলএ ফাটাকেষ্ট’। প্রায় দেড় ঘণ্টা সুকান্ত মজুমদার, রাহুল সিনহা, কল্যাণ চৌবের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা করেন তিনি। সূত্রের খবর, সেখানেই রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ফাঁকে একুশের বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ উঠতেই পর পর ভোটে হারার কারণ জানতে চান ‘মহাগুরু’।
সূত্রের খবর, সেখানেই মানিকতলা উপনির্বাচনে মিঠুনকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন গতভোটে প্রয়াত সাধন পান্ডের কাছে হারা কল্যাণ চৌবে। দলের একটি মহল অবশ্য সংস্কৃতি জগৎ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হওয়া রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের শূন্য আসনে মিঠুনকে পাঠাতে চায়। মঙ্গলবার বিজেপির একাধিক নেতা ন্যাশনাল লাইব্রেরির শ্রমিক সংগঠনের বৈঠকে মিঠুনকে রাজ্যের কোনও লোকসভা আসনে প্রার্থী করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এদিন সল্টলেকে তৃণমূল সাংসদ দেবের সঙ্গে একটি শুটিংয়ে ছিলেন মিঠুন। তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “দু’জন পেশাদার অভিনেতা শুটিং করছে, করতেই পারেন। সেখানে সৌজন্য থাকবেই। কিন্তু গেরুয়া পার্টির নেতা-অভিনেতার বাংলায় যে গ্রহণযোগ্যতা নেই তা বাংলার রায়ে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
‘মহাগুরু’কে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যদিও এদিন বলেন, “মিঠুন দা হেভিওয়েট প্রচারক। স্বাভাবিকভাবে সেই অস্ত্রকে নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যবহার করা হবে। যুদ্ধে সব সময় তো পরমাণু বোমা ব্যবহার করা হয় না। যখন পরমাণু বোমার প্রয়োজন হবে, আমরা চার্জ করব।” অর্থাৎ শাসকদলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মিঠুনকে পরমাণু বোমার সঙ্গে তুলনা করেছেন সুকান্ত।
এই পরমাণু বোমা ইস্যু নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। মিঠুনকে ‘রিজেক্টেড জলঢোঁড়া’ বলে তীব্র কটাক্ষ করে তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য, “২০২১ সালের ভোটে পরমাণু বোমা কি রাজ্য বিজেপির নিজেদের পিছনে ফেটেছিল? না হলে বিধানসভা ভোটে ওদের দলের এমন বেহাল দশা হবে কেন?” এখানেই থামেননি তিনি।
মহাগুরুর উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, “আপনি সিনেমায় বড় নায়ক হতে পারেন। কিন্তু রাজনীতিতে একজন ফ্লপ, বিশ্বাসঘাতক। আগে নকশাল করতেন। জায়গা পাননি। কোনও পার্টিতে গুরুত্ব পাননি। মুম্বই চলে গিয়েছিলেন। সেখানে কিছু করতে না পেরে চলে গেলেন উটি। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, স্বপন দাশগুপ্তর সিট চাই বলে কান্নাকাটি করছেন।”
তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, ”ন্যূনতম কৃতজ্ঞতা থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চাওয়া উচিত। মিঠুনের বাংলার রাজনীতিতে কোনও গ্রহণযোগ্যতাই নেই। কিছু একটা কেস ছিল বলে শুনেছি। আমরাও তো কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে লড়ছি। তা বলে গোখরোর এত ভয়?” কটাক্ষ কুণালের।
এদিকে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন,“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে দাদা বলে ডেকে এনে রাজ্যসভা দিলেন, বিজেপির হয়ে তাঁরই পিঠে ছুরি মারতে গিয়েছেন। এই গদ্দারি ঠিক নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.