অর্ক দে, বর্ধমান: বোনঝিকে শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছে দেওয়াই ছিল লক্ষ্য। আর সে কারণেই স্বামী, সন্তান এবং বোনঝিকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন মফিজা খাতুন। কিন্তু বর্ধমান স্টেশনেই যে বিপদ ওঁত পেতে রয়েছে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি মহিলা। চোখের সামনে জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে স্ত্রীর প্রাণহানিতে কার্যত বাকরুদ্ধ স্বামী। কান্নায় ভেঙে পড়েছে সদ্য মাতৃহারা সন্তানও।
নিহত বছর পঁয়ত্রিশের মফিজা খাতুন। বর্ধমানের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের লাকুরডিহির বাসিন্দা। স্বামী এবং সন্তান নিয়ে সংসার তাঁর। সম্প্রতি দিল্লি থেকে তাঁর বোনঝি মেহেরুন্নেসা শেখ এসেছিলেন বর্ধমানে। তিনি দিল্লিতেই এমবিএ পড়ছেন। বুধবার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বোনঝির রাজধানী এক্সপ্রেসে ওঠার কথা ছিল। ট্রেনে তুলে দিতে যাচ্ছিলেন মফিজা। সে কারণে বাড়ি থেকে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন বধূ। কিন্তু বর্ধমান স্টেশনে শিয়ালদহগামী ট্রেন ধরতে গিয়ে যে এমন অঘটন ঘটবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাঁর পরিবারের কেউ। চোখের জলে ভাসছেন সদ্য স্বজনহারারা।
বর্ধমান স্টেশনে জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ায় প্রাণ হারিয়েছে বছর সতেরোর কান্তিকুমার বাহাদুর। ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের বাসিন্দা সে। হুগলির পাণ্ডুয়ায় এক আত্মীয়ার বাড়িতে গিয়েছিল। সঙ্গী দুই বন্ধু। দুর্ঘটনার মাত্র কিছুক্ষণ আগে বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছন। বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব করার সময় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে জলের ট্যাঙ্ক। জলের তোড়ে ছিটকে রেললাইনের কাছে গিয়ে পড়ে কান্তি। মাথায় আঘাত লাগে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তার। চোখের সামনে বন্ধুবিয়োগে আতান্তরে তাঁর সঙ্গে থাকা আরও দুই নাবালক। পুলিশের তরফে কান্তির পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
মফিজা, কান্তিকুমার ছাড়াও বুধবারের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আরও একজন। সোনারাম টুডু নামে বছর সাতাশের ওই যুবকের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলেই খবর। রেলের গাফিলতিতেই এত বড় কাণ্ড ঘটল বলেই দাবি পরিবারের। যদিও পুরো বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ বলেই পালটা দাবি রেলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.