সম্যক খান, মেদিনীপুর: পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রকৃত বংশধর কে! তা নিয়ে দিনভর চলল নাটক। দুপক্ষই নিজেদের দাবির সমর্থনে বংশপঞ্জী থেকে শুরু করে নানান দলিল তুলে ধরেছেন সকলের সামনে। একজন অমিতাভ বন্দোপাধ্যায়, অপরজন প্রসাদ বন্দোপাধ্যায়। সোমবার বিদ্যাসাগরের জন্মভিটে বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে এই ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা গ্রাম।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তো বটেই, জেলা, রাজ্য তথা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ পর্যন্তও এতদিন সকলে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশধর হিসেবে অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চিনতেন। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তাঁকে মুখ্য ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পোস্টারেও থাকত অমিতাভ বন্দোপাধ্যায়ের ছবি। তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যাসাগরের পরিবার বা উত্তরপুরুষ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সোমবার দু’জনেই হাজির হয়েছিলেন বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয়। দুজনেই মাইক হাতে গ্রামবাসীদের সামনে নিজেদের স্বপক্ষে বক্তব্য জানাতে থাকেন।
প্রসাদবাবু দাবি করেছেন, তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশধর। বংশতালিকা ও তথ্য প্রমাণ দিয়ে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ছোটভাই ঈশান চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতির ছেলে। প্রসাদবাবুর অভিযোগ, অমিতাভবাবু বিদ্যাসাগরের বংশের কেউ নন। উনি মিথ্যে প্রচার করছেন। অপরদিকে অমিতাভবাবুও তার বংশগত ইতিহাস তুলে ধরেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মেজমেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন তিনি। তবে তার যুক্তি ছিল অনেকটাই দুর্বল। শেষমেশ অমিতাভবাবু স্বীকার করে নেন যে তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশের সরাসরি কেউ নন। উত্তরসূরী হিসেবে তিনি তার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যাসাগর মিশনের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি ওই মিশনেনর উত্তরসূরী। দীর্ঘ এই বিতর্কের জেরে একসময় রীতিমতো বিব্রত অবস্থায় পড়েন গ্রামবাসী থেকে শুরু করে বিদ্যাসাগর স্মৃতিমন্দির কমিটিও। কমিটির সম্পাদক শক্তিপদ বেরা বলেছেন, অমিতাভ বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে আমাদের মনেও একটা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু উনি নিজেকে বিদ্যাসাগর নিয়ে সমাজসেবামূলক কাজ করার জন্য এখানে এসেছিলেন। ফলে কে কার প্রকৃত বংশধর তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এখন পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট। তবে বিষয়টির মধুরেণ সমাপয়েৎ হওয়ার জন্য স্বস্তিতে সকলেই।
প্রসঙ্গত, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ছোট ভাই ঈশান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দুই ছেলে পরেশ ও কেদার। পরেশের চার ছেলে প্রশান্ত, পরিমল, প্রণব ও পার্থ। কেদারের দুই ছেলে জগদীশ ও মদন। মদনের ছেলে হলেন প্রসাদ বন্দোপাধ্যায়। যিনি বর্তমানে বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা। এদিকে অমিতাভবাবুর দাবি, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মেজ মেয়ে কুমুদিনী দেবী। তার নাতি শেখরনাথ চট্টোপাধ্যায়। অমিতাভবাবুর দাবি তার বাবা শেখর নাথ চট্টোপাধ্যায়ের পিসতুতো দাদা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.