সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কংগ্রেস-তৃণমূল অলিখিত জোটের পুরপ্রধানকে কে? তলবি সভায় পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায় অপসারিত হওয়ার পর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ঝালদা। পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভায় (Jhalda Municipality) গত বুধবার অনাস্থার তলবি সভায় তৃণমূল কংগ্রেসের ৫ ও কংগ্রেসের ২ জন-সহ মোট ৭ ভোটে অপসারিত হন শাসকদলের পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়। গত দু’বছর ধরে এই পুরসভার ক্ষমতা দখলে শাসকদল তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে কংগ্রেসের যে লড়াই ছিল সেই আবহেই ক্ষমতা দখলের জন্য কংগ্রেস-তৃণমূল জোট বেঁধে শাসকের পুরপ্রধানকে অপসারণ করে। বিশেষ করে এই রাজনৈতিক লড়াইয়ের আবহে কংগ্রেস (Congress) কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যাকাণ্ডের পর যা নজিরবিহীন।
পুরবিধি মোতাবেক পুরপ্রধান (Chairman) অপসারিত হলে উপ-পুরপ্রধান বৈঠক ডেকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। কিন্তু বর্তমানে এই পুরসভায় কোনও উপ-পুরপ্রধান নেই। নিহত তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু ওই পদ থেকে আগেই ইস্তফা দেন। ফলে এক্ষেত্রে প্রশাসনকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া এই সমগ্র বিষয়টি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারাধীন। কারণ, অপসারিত তৃণমূল পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়ের কাউন্সিলর পদ খারিজ বিষয়ে মামলা চলছে হাইকোর্টে। ফলে পুরপ্রধান নির্বাচনের দিনক্ষণ কবে হবে তা নিয়ে কেউ কিছুই বলতে পারছেন না।
তবে পুরপ্রধানের কুর্সিতে কে বসবেন, তা নিয়ে জল্পনার পাশাপাশি অলিখিত শাসক ও কংগ্রেসের জোটের আলাপ-আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। ঝালদা পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর বিপ্লব কয়াল বলেন, “পুরপ্রধান কে হবেন সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে ঝালদার পুর বোর্ডের বিষয়টি এখন বিচারাধীন।” প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূল কাউন্সিলর সুরেশ আগরওয়ালের কৌশলী চালে শীলা চেয়ার হারানোর পর অত্যন্ত সাবধানী তিনি। সুরেশ আগরওয়ালের কথায়, “পুরপ্রধান কে হবেন সেটা দল সিদ্ধান্ত নেবে।”
তবে এই বিষয়ে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল এখনও কিছু ভাবনাচিন্তায় করেনি বলে খবর। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় হুইপ অমান্য করে যেভাবে পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়কে অপসারিত করা হলো এই বিষয়ে ঝালদা শহর তৃণমূল নেতৃত্বের রিপোর্টের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে জেলা তৃণমূল। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “দলীয় স্তরে রিপোর্ট এলে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হবে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী আলোচনা হবে। তারপর রাজ্য নেতৃত্ব যা নির্দেশ দেবে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করব।”
শীলা চট্টোপাধ্যায় ও কংগ্রেসের চার কাউন্সিলর-সহ মোট ৫ জন গত সেপ্টেম্বরে তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরই ঝালদা পুরসভায় আড়াআড়ি দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে দুই শিবির। অপসারিত পুরপ্রধান-সহ তৃণমূলে যোগ দেওয়া কংগ্রেসের চার কাউন্সিলর একদিকে। অন্যদিকে শাসকদলের প্রতীকে জেতা ৫ কাউন্সিলর। এই ৫ কাউন্সিলর স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এর মধ্য থেকে যে কাউকে পুরপ্রধান করা যেতে পারে, তাতে তাঁদের কোনওরকম আপত্তি নেই। কিন্তু সেপ্টেম্বরে শীলা চট্টোপাধ্যায়-সহ কংগ্রেসের যে চার কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকে পুরপ্রধান পদে কাউকে দায়িত্ব দিলে দলীয় প্রতীকে জেতা কাউন্সিলররা মানবেন না। দলীয় প্রতীকে জেতা ৫ কাউন্সিলরের মধ্যে পুরপ্রধানের বিষয়ে প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান সুদীপ কর্মকারের নাম ভাসছে। অন্যদিকে, এই অলিখিত জোটে কংগ্রেসের বিপ্লব কয়ালের নামও উঠে আসছে। উঠে আসছে আবার সেই সুরেশ আগরওয়ালের নামও। যদিও এই বিষয়ে সুরেশের ঘনিষ্ঠ মহল একেবারে মুখে কুলুপ এঁটেছে। তাদের কথায়, ‘দলবদলু’ শীলাকে সরানো গিয়েছে, এটাই বড় বিষয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.