দীপঙ্কর মণ্ডল: করোনা পরীক্ষায় বাংলার কিট চেয়ে পাঠাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি বায়োটেক সংস্থা বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা কিট তৈরি করেছে। মাত্র ৫০০ টাকা দামের সেই কিট ৯০ মিনিটের মধ্যে বলে দেয় কোনও ব্যক্তির শরীরে মারণ কোভিড-১৯ আছে কি না। শনিবার রাজ্যের সেই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে WHO। রবিবার প্রথম ধাপে ১০০০ কিট যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই খবরে উচ্ছ্বসিত। এদিন রাজ্যের উপাচার্যদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালীন বিষয়টি জেনে অভিনন্দন জানান পার্থবাবু।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাখরাহাটের জিসিসি বায়োটেক। গত দুই মাসের নিরলস প্রচেষ্টায় এই সংস্থা বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা করোনা পরীক্ষার কিট তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে আইসিএমআর যার অনুমোদনও দিয়েছে। সংস্থার অধিকর্তা ড. রাজা মজুমদার জানিয়েছেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। রবিবার আমরা ১০০০টি কিট পাঠাচ্ছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের কিট যদি দুঃস্থদের কাজে লাগে তাহলে আমাদের গবেষণা সার্থক হবে।” এই গবেষক জানিয়েছেন, করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, এইডস-সহ বিভিন্ন অসুখের সস্তায় পরীক্ষা করার লক্ষেই তাঁরা কাজ করেন। প্রত্যন্ত গ্রামে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁরা প্যাথলজি তৈরিতে সাহায্য করবেন।
সিএসআইআর-এর প্রাক্তন বিজ্ঞানী অধ্যাপক সমিত আঢ্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজির অধ্যাপক কৌস্তুভ পণ্ডা-সহ এক ঝাঁক গবেষক দক্ষিণ ২৪ পরগনার গবেষণাগারে টানা দু’মাস পরিশ্রম করেন। চলতি মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক স্বীকৃতি দেয়। এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই আসাম, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা-সহ বিভিন্ন রাজ্য কিট নিয়ে যাচ্ছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বৈঠকের শুরুতে এই কিটের কথা শিক্ষামন্ত্রীকে জানান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও যে যোগাযোগ করেছে সে কথাও জানান শিক্ষামন্ত্রীকে। যুগান্তকারী এই আবিষ্কারের জন্য অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি পার্থবাবু।
করোনা পরীক্ষার জন্য যেখানে হাজার হাজার টাকা খরচ হয় সেখানে কীভাবে মাত্র ৫০০ টাকাতেই তা সম্ভব হচ্ছে? আবিষ্কারক দলের অন্যতম সদস্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌস্তুভ জানিয়েছেন, “কিটের ভিতরে থাকা কোনও কাঁচামাল বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়নি। সমস্ত সামগ্রী আমরা বাংলার গবেষণাগারে তৈরি করেছি। তার ফলেই এত কমদামে পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।” আইসিএমআর সূত্রে খবর, ১০০, ২০০ এবং ৫০০টি কিটের প্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে। মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যেই ফল জানা যাচ্ছে। আইসিএমআর অনুমোদিত যে কোনও ল্যাবে প্রতিদিন অন্তত ১০০০ জন রোগীর পরীক্ষা সম্ভব।
জিসিসি বায়োটেক জানিয়েছে, এই মুহূর্তে প্রতি মাসে এক কোটি কিট উৎপাদনের কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে দ্বিগুণ উৎপাদন সম্ভব। প্রতিবেশী রাজ্যগুলি নিজেরা উদ্যোগী হয়ে এই কিট নিয়ে গেলেও ‘নিজ ভূমে পরবাসী’ হয়ে আছে জিসিসি বায়োটেক। ৫00 টাকার এই পরীক্ষা ব্যবস্থা এ রাজ্যের কোথাও এখনো চালু হয়নি। এ প্রসঙ্গে সংস্থার অধিকর্তা বলেন, “আমাদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক খুব ভালো। স্বাস্থ্য ভবনের তরফে খুব তাড়াতাড়ি নিশ্চই যোগাযোগ করা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.