ধনরাজ তামাং, দার্জিলিং: ভরা ডিসেম্বর। পাহাড়প্রেমীদের জন্য এ সময়ের দার্জিলিং বড় প্রিয়। আসলে ডিসেম্বরের ঠান্ডায় পাহাড়ি পরিবেশ উপভোগ করার মজাই আলাদা। সেই সঙ্গে আবার পাহাড়ের ডগায় বরফ দেখার সৌভাগ্যও হয়ে যেতে পারে। তবে এবারের পাহাড়ে ঠান্ডার তুলনায় উত্তাপই যেন বেশি। যদিও সেই উত্তাপ আবহাওয়ার নয়, রাজনীতির। প্রায় দেড় দশক বাদে পাহাড়ের রাজনীতিতে যেন বদলের হাওয়া বইছে। গোটা রাজ্যে যে কংগ্রেসের সংগঠন তলানিতে, সেই কংগ্রেস এবার পাহাড়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে উঠে আসছে।
বিনয় তামাং (Vinay Tamang) ইতিমধ্যেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। হরকা বাহাদুর ছেত্রী যোগাযোগ রাখছেন। হামরো পার্টির (Hamro Party) নেতা অজয় এডওয়ার্ড, ভারতীয় গোর্খা পরিসঙ্গ নেতা মুনিশ তামাংরা মঙ্গলবারই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন। সরকারিভাবে কিছু ঘোষিত না হলেও পাহাড়ের অধিকাংশ দলই কংগ্রেসকে (Congress) সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ব্যতিক্রম শুধু অনীত থাপার বিজিপিএম (BGPM) এবং মন ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ (GNLF)। অনীত থাপা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। আর মন ঘিসিং বিজেপির (BJP) জোটসঙ্গী। আর বিমল গুরুং পাহাড়ে পুরোপুরি প্রভাবহীন। এদের বাদ দিলেও দার্জিলিংয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে। তারা সকলেই আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত একপ্রকার পাকা করে ফেলেছেন। এই মুহূর্তে পাহাড়ে কান পাতলেই শোনা যাবে, এবার দার্জিলিং লোকসভা (Darjeeling Lok Sabha) কেন্দ্রে বড় শক্তি হিসাবে উঠে আসছে কংগ্রেস।
কিন্তু প্রশ্ন হল, যে কংগ্রেস বঙ্গ রাজনীতিতে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার পথে, দু-একটা জেলা ছাড়া রাজ্যের বেশিরভাগ অংশে যারা কার্যত সাইনবোর্ড, সেই কংগ্রেস হঠাৎ দার্জিলিংয়ের মতো লোকসভায় প্রভাব বাড়ানোর পাহাড়প্রমাণ কাজটি কী ভাবে করছে? এর নেপথ্যে কারণ একাধিক। প্রথমত, দার্জিলিংয়ে টানা ১৫ বছর সাংসদ রয়েছে বিজেপির। কিন্তু পাহাড়বাসী বলছে, এই ১৫ বছরে দার্জিলিংয়ে নিজেদের দেওয়া কোনও প্রতিশ্রুতিই রাখেনি গেরুয়া শিবির। পাহাড় সমস্যার মূলে দুটি ইস্যু। এক, পৃথক রাজ্যের দাবি এবং দুই, পাহাড়ের মূল নিবাসীদের তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দেওয়া। গত দেড় দশকে এই দুটি মূল প্রতিশ্রুতি নিয়েও কাজ করেনি বিজেপি। ফলে পাহাড়বাসী বিজেপির উপর ভালোমতো ক্ষুব্ধ।
এখন প্রশ্ন হল, সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে তৃণমূল (TMC) প্রথম পছন্দ হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পাহাড়ের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের বদ্ধমুল ধারণা, ‘বাংলার দল’ তৃণমূল কোনওভাবেই পাহাড়বাসীর মূল দুই দাবি পূরণে সাহায্য করবে না। সেকারণে তৃণমূলের দিকে সেভাবে ঝুঁকছেন না সাধারণ ভোটাররা। তাছাড়া অনীত থাপার (Anit Thapa) সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুসম্পর্কের দরুণ তৃণমূল পাহাড়ে সেভাবে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টাও করছে না। অবধারিতভাবে তৃতীয় বিকল্প খুঁজছেন ভোটাররা। আর সেক্ষেত্রে উঠে আসছে জাতীয় দল কংগ্রেসের নাম। তাছাড়া পাহাড়ে বিজেপির আগে শেষবার কংগ্রেসেরই সাংসদ ছিল। ২০০৪ সালে দার্জিলিং থেকে জিতেছিলেন কংগ্রেসের দাওয়া নারবুলা। পাহাড়বাসীর কাছে কংগ্রেস অচেনা নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.