কিংশুক প্রামাণিক: এ বছর ঋণের উপর সুদ বাবদ দিতে হবে ৪৭ হাজার কোটি টাকা৷ সামনের বছর আরও খানিকটা বেড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা৷ অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজ্যের কোষাগার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার কেটে নেবে এক লক্ষ সাত হাজার কোটি টাকা৷ এই কঠিন পরিস্থিতি রাজ্য সরকার মোকাবিলা করবে কীভাবে? চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আরও চিন্তার কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের পাশে নেই৷ সুদ মকুবের দাবি কংগ্রেসের পর বিজেপি সরকারও গ্রাহ্য করেনি৷ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কেন্দ্রীয় প্রকল্প৷
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি খরচে রাশ টানতে শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মঙ্গলবার হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি সরকারি কর্তাদের জানিয়ে দিলেন, রাজ্যের মানুষকে গুড গভর্ন্যান্স দিতে তাঁর সরকার প্রতিশ্রূতিবদ্ধ৷ কিন্তু বাজে খরচ বা অপচয় বন্ধ করতে হবে৷ সরকারি কাজে কোনও দেরি অথবা গাফিলতি তাঁর কথায়, ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’৷ এদিন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এক বছরের মধ্যে আবার যদি এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ওরা কাটে তাহলে সরকারটা চালাব কী করে? আমরা খুব কষ্ট করে চালাচ্ছি৷ প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও জনপ্রতিনিধিদের দেখতে হবে এই সময় কোনও প্রকল্পে সরকারের একটি টাকাও যেন নষ্ট না হয়৷ আমাদের গরিবের সংসার৷ ফলে মানুষের কাজ কোনও ভাবে ব্যাহত করা যাবে না৷ আবার অর্থের অপচয়ও বরদাস্ত হবে না৷”
পরে মুখ্যমন্ত্রীর এই কঠোর মনোভাব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সঠিক কথাই বলছেন৷ আগামী তিন বছর আমাদের মতো রাজ্যের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ ঋণের সুদ ক্রমাগত বাড়ছে৷ অনেক হিসাব কষে চলতে হবে৷ সেই বিষয়টিতে মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়েছেন৷ এ নিয়ে অবশ্য ভোটের আগে থেকে উনি ব্যবস্থা নিয়েছেন৷ সব মিটিংয়েই তিনি অপচয় বন্ধের কথা বলছেন৷
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর এদিন ছিল জেলার দ্বিতীয় প্রশাসনিক বৈঠক৷ সরকারি হিসাবে তৃণমূলের জমানার ১২৮তম৷ এর পর আগামী ২৭ তারিখ আলিপুরদুয়ার ও ২৮ তারিখ জলপাইগুড়ির প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে৷ তার পর একে একে বাকি জেলাগুলিতেও হবে৷ এদিন হাওড়ার বৈঠকের শুরুতেই কেন্দ্রীয় ঋণের প্রসঙ্গ তোলেন মমতা৷ বাম আমলের দু’লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল৷ সেদিন থেকেই মমতা বলে আসছেন, বাম পাপের বোঝা তিনি কেন নেবেন৷ কেন্দ্র পাশে দাঁড়াক৷ কিন্তু কিছুই হয়নি৷ ভবিষ্যতে হবে, এমন গ্যারাণ্টিও নেই৷ সেই প্রেক্ষিতে তিনি এখন উন্নয়ন জারি রাখতে ঘর সামলানোয় জোর দিলেন৷ তথ্য দিয়ে এদিন বোঝান, এত টাকা যখন শোধ করতে হবে, তখন কোনও গাফিলতি বরদাস্ত হবে না৷ সময়ে কাজ করলে খরচ কম হয়৷ এই সার সত্যটা সবাইকে বুঝতে হবে৷ টেন্ডারে ভুলত্রূটির জন্য কাজ দেরিতে হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে৷ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, টেন্ডারের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম হওয়া দরকার৷ ক্রটি কেন হবে? তাতে কাজটাই তো হল না৷ এই ধরনের ক্ষেত্রে ভুল হওয়াটা ফৌজদারি অপরাধ৷ মানুষের কাজ দেরিতে হতে পারে না৷ তেমন হলে মানুষই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সরকারেরও খরচ বাড়ে৷
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের সময়জ্ঞান বজায় রাখতে হবে৷ আগে বছরের পর বছর কাজ আটকে থাকত৷ এই জমানায় তা চলবে না৷ প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শ্রম দফতরে নানারকম ভাতার ব্যবস্থা আছে৷ একজনই হয়তো দশরকম ভাতা পাচ্ছেন৷ কেন এটা হবে? সরকারি অর্থের অপচয়৷ সব কিছুকে এক ছাতার তলায় আনতে হবে৷ তাহলে খরচ কিছুটা কমবে৷ এভাবেই সব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে কোনও একটি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বদলি হলে সেই প্রকল্পের কাজ আটকে পড়ে৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, বদলির অর্ডার তখনই কার্যকর হবে, যখন সঠিকভাবে চার্জ হ্যান্ডওভার হবে৷ অর্থাৎ, নিজের কাজটা নতুন সহকর্মীকে বুঝিয়ে দিয়েই অন্যত্র জয়েন করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী৷ এদিনের বৈঠক থেকেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থকে কিছু পদক্ষেপ নিতে বলেন মমতা৷ বলেন, এখন থেকে সব পাড়ায় কতগুলি ক্লাব, কতগুলি মন্দির, কতগুলি সংস্থা, কত বাড়ি, কত ভাড়াটিয়া আছে, এলাকায় কী কী উৎসব হয়, তার তালিকা স্থানীয় থানায় রাখতে হবে৷ নতুন কে আসছে-যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত নজরদারি রাখতে হবে৷ এগুলি করতে হবে এই কারণেই যে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করার গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে৷ সেই ষড়যন্ত্র প্রশাসনকেই রুখতে হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.