সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়নকেই টার্গেট করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজ্যের বিরোধী শক্তিগুলির সংঘবদ্ধ বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁর উন্নয়নকেই বেছে নিয়েছে রাজ্যের মানুষ৷ ফলত দ্বিতীয় দফায় উন্নয়নের স্রোতকে আরও বেশি জনমুখী করে তুলতে গোড়া থেকে বদ্ধপরিকর মুখ্যমন্ত্রী৷ শুক্রবার রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের প্রস্তাবিত বাজেট জানিয়ে দিল, আগামী দিনে কোন পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্য সরকার৷
এদিন বিধানসভায় প্রথমেই বিগত আর্থিক বর্ষে রাজ্যের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী৷ জানান, রাজ্যে আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ কমে হয়েছে ২.৬৮ শতাংশ, রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১.০৩ শতাংশ৷ বিপুল ঋণের বোঝা সত্ত্বেও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয়বৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে চার গুণ৷ কৃষিক্ষেত্রে ব্যয়বৃদ্ধি হয়েছে সাত গুণ এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েছে ৪ গুণ৷ গীতাঞ্জলি আবাসন প্রকল্পে ২ লক্ষেরও বেশি পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে৷ ১০০ দিনের কাজে ৮৫ লক্ষ কর্মদিন তৈরি করা হয়েছে সম্ভব হয়েছে৷ দেশের প্রথম জেলা হিসেবে নদিয়া ‘মুক্ত শৌচহীন’ জেলা হিসেবে সাফল্য লাভ করেছে৷ রাজ্যের বহু প্রকল্প যে ভিনরাজ্যেও অনুসরণ করা হচ্ছে এবং মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত প্রশাসনিক ক্যালেন্ডারও অন্য রাজ্যে অনুসরণ করা হচ্ছে তাও জানান তিনি৷ ঠিক এই জায়গা থেকেই তিনি তুলে ধরলেন পরবর্তী উন্নয়নের রূপরেখাটিকেও৷
১) উচ্চশিক্ষায় গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য স্বামী বিবেকানন্দের নামে চালু স্কলারশিপের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হল৷ এক্ষেত্রে ২০০ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হল৷ একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল ও সাধারণ ডিগ্রি কোর্সের দরিদ্র মেধাবী ছাত্ররাও এর ফলে উপকৃত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷
২) শিক্ষায় আধুনিকীকরণের জন্য ‘ভারচুয়াল ক্লাসরুম’-এর প্রস্তাব রাখা হল৷ হাই স্পিড ইন্টারনেট ও বিশেষ কম্পিউটারের সাহায্যে রাজ্যের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হল৷ রাজ্য সরকারের অনুমোদিত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ৭৩২টি ও মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ২০০০টি ক্লাসরুমের প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ ই-ক্লাসরুমের জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা৷
৩) কর প্রদানে টিডিএস সার্টিফিকেটের কাজ এতদিন হাতে হাতে করা হত৷ এবার সেই ম্যানুয়াল ব্যবস্থার পরিবর্তে অনলাইনে টিডিএস জমা দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে৷
৪)বৃত্তিকর ছাড়ের উর্দ্ধসীমা করা হল ১০,০০০ টাকা৷
৫) কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হল ২২ লক্ষ৷
৬) পড়ে থাকা সেলস ট্যাক্স সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য যে ‘সেটেলমেন্ট কমিশন’ ছিল, তা তুলে দেওয়া হল৷ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার কারণেই এই কমিশন বর্তমানে প্রয়োজনহীন বলে জানানো হল৷
৭) ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তার সুযোগ পাওয়ার সময়সীমা আরও ৩ বছর বাড়ানো হল৷
৮) চা বাগান গুলির ক্ষেত্রে বিশেষ সেস মুকুবের প্রস্তাব৷
এই প্রস্তাবগুলি থেকে স্পষ্ট, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার পথেই হাঁটছে রাজ্য সরকার৷ এতদিন কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর মতো প্রকল্পের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল৷ সেগুলির পাশাপাশি এবার অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে বাংলার শিক্ষার মানোন্নয়নেও জোর দেওয়া হল৷ রাজ্যের যে উন্নয়নের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী, তা পূরণ করতে শিক্ষার এই আধুনিকীকরণ অত্যন্ত জরুরী ছিল৷ দ্রুত উন্নয়ন ও ফেলে রাখা কাজে বিশ্বাসী মুখ্যমন্ত্রীর বাজেটও ইঙ্গিত দিচ্ছে কোনও কাজেই বেশি সময় নিতে চান না তিনি৷ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তাঁর কাজকে যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে চান৷ আর তাই অনলাইনে টিডিএস সার্টিফিকেট চালু বা ফাস্ট ট্র্যাকের উপর ভরসা রেখে সেটেলমেন্ট কমিশন তুলে দেওয়া তারই ইঙ্গিত৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.