Advertisement
Advertisement

Breaking News

West Midnapore

মাদুরে বোনা রামায়ণের গল্প! অসাধারণ হস্তশিল্পে জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন সবংয়ের ২ নারী

রাষ্ট্রপতি পুরস্কার আসছে দুই 'গৌরী'র হাতে।

West Midnapore artists depict Ramayana on carpet, gets national acclamation | Sangba Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 29, 2021 7:42 pm
  • Updated:August 29, 2021 7:49 pm  

অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: মাদুরে বোনা রামায়ণের (Ramayana) গল্প, মসলন্দের দু’পাশের অসাধারণ নকশা যেন কাব্যগাথা। এই জোড়া হাতের কাজেই এবার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Midnapore) সবংয়ের ২ ‘গৌরী’ – গৌরী জানা এবং গৌরী দাস। করোনা পরিস্থিতির জন্য প্রায় ২বছর পিছিয়ে গিয়েছে হস্তশিল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রদান প্রক্রিয়া। ২০১৮ সালে হস্তশিল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রাপক হিসেবে নির্বাচিত হন দু’জন। অতি সম্প্রতি সারতা গ্রামের দুই গৃহবধূ পেয়েছেন সুখবর। স্বভাবতই খুশি আর ধরছে না তাঁদের। এত বছরের পরিশ্রমের স্বীকৃতি মিলছে, এ কী কম আনন্দের!

২০১৮ সালে বুননশিল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রদানের জন্য আবেদনপত্র পাঠানোর বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল ২০১৯ সালে। তারপর করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতির জন্য পিছিয়ে যায় গোটা প্রক্রিয়া। সেবার এবারের প্রতিযোগিতায় গৌরীবালা দাস এবং গৌরীরানি জানা দু’জনেই পাঠিয়েছিলেন তাঁদের হাতে বোনা মসলন্দ, যা স্থানীয় ভাষায় ‘মছলন্দি’ বলেই পরিচিত। গৌরীবালা দাসের তৈরি মসলন্দটির দু’পাশে যে অপূর্ব নকশা, বুনেছেন তাইই মন কেড়ে নিয়েছে বিচারকদের। তার চেয়েও বড় কথা, মাত্র ২৫০ গ্রাম ওজনের এই মাদুর কেউ অনায়াসে পার্সে ভরে নিতে পারেন। অন্যদিকে, গৌরীরানি জানার মসলন্দটিতে মাদুরকাঠির (Mat) বুননে এঁকে ফেলেছেন রামায়ণের ‘সীতাহরণ পালা’। চেরা মাদুরের কাঠি দিয়ে বোনা সেই অনুপম শিল্প সৌন্দর্যে মজেছেন বিচারকরা। সারতা গ্রামের গৌরী জানা কাজের জন্য এখন বালিচকে থাকেন। তাই সবংয়ের সঙ্গে সঙ্গে গর্বিত বালিচকও।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সীমান্তে গরু পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য, কোচবিহারে বিএসএফের গুলিতে নিহত ২ বাংলাদেশি]

জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির খবর শুনে গৌরী দাসের আনন্দ বাঁধভাঙা। বলছেন, ”আমার ৪৫বছরের সাধনার স্বীকৃতি পেলাম। ১৮বছর বয়সে নারায়নগড় থানার দুরিয়া গ্রাম থেকে আমার স্বামী নিশিকান্ত দাসের হাত ধরে গৃহবধূ হয়ে এসেছিলাম। বাপের বাড়ি থেকে শিখে এসেছিলাম দোহারা মাদুর বোনা। আমার শাশুড়ি আমাকে হাতে ধরে শিখিয়ে ছিলেন এই মসলন্দ বোনা। আমার এই পুরস্কার যেদিন হাতে আসবে, তাঁকেই প্রণাম হিসাবে নিবেদন করব।”

বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক শিক্ষক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, “এটা জেনে খুবই ভাল লাগছে যে আমাদের এলাকার একজন শিল্পী জাতীয় স্তরে তাঁর গুণের মর্যাদা পেতে চলেছেন। আরও গর্বের কথা, এর আগেও এই পুরস্কার এসেছে তাঁর স্বামী আরেক গুণী শিল্পীর হাতে।বালিচকবাসী হিসাবে এই গর্ব আমাদেরও।”

[আরও পড়ুন: বাড়ি বসেই মিলবে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের’ ফর্ম, অভিনব উদ্যোগ জেলা প্রশাসনের]

রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা সবং বিধায়ক মানস ভুঁইঞা জানিয়েছেন, “আমি কৃতজ্ঞ সবংয়ের শিল্পীদের প্রতি। বারবার সবংকে জাতির দরবারে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। এর আগেও ৮জন এই রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। সবংয়ের মাদুর শিল্প ও শিল্পীদের জন্য আমরা নিবেদিত।”

১৯৯২ সালে এই সারতা গ্রাম থেকে মাদুর শিল্পের ওপর প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন পুষ্পরানি জানা। সবংয়ের মাদুরের বিশ্ব পরিচিতি ছিল আগেই। পুষ্পরানি জানা জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর তা আরও বেশি সমাদৃত হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে পুরস্কার পেয়েছেন অলক জানা ও মিঠু জানা। ২০১৬ সালে এই মাদুর বুনে জাতীয় পুরস্কারটি পেয়ে ছিলেন তাপস জানা। ঘটনাক্রমে তাপস জানা এবারের জাতীয় পুরস্কার প্রাপক গৌরী জানার স্বামী। আর তার ২বছর পর একেবারে জোড়া রেকর্ড সবংয়ের মাটিতে। একই সঙ্গে জোড়া জাতীয় পুরস্কার। সারা দেশ থেকে মোট ২২ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে নগদ ১ লক্ষ টাকা পুরস্কার মূল্য ছাড়াও রয়েছে স্মারক, সম্মানপত্র, শাল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement