চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বিঘার পর বিঘা জমিতে সবুজ গাছে ফুটে রয়েছে সাদা বা হালকা গোলাপি ফুল। পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার অজয়ের চর বা অণ্ডাল-রানিগঞ্জ এলাকায় বছরের নানা সময়ে চোখে পড়ে এই ছবি। খনি অঞ্চলে বেআইনি পোস্ত চাষের এই রমরমা বন্ধে অভিযান হয় মাঝে-মধ্যে। কিন্তু পাকাপাকিভাবে তাতে দাঁড়ি পড়ে না। নভেম্বর- ডিসেম্বরে পোস্ত চারা রোপণের আগেই ব্যবস্থা নিল জেলা প্রশাসন। সাধারণের মধ্যেসচেতনতার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে ড্রোন নামানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
[ডেঙ্গুর ছদ্মবেশে রাজ্যে হানা মারণ ‘ব্রুসেলা’র]
এই নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয় আসানসোলে। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক শশাঙ্ক শেট্টি একাধিক দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। যেখানে সিদ্ধান্ত হয় বেআইনি পোস্ত চাষ রুখতে নজরদারি চালাবে প্রশাসন। সব বিভাগকে নিয়ে যৌথ অভিযান চালানো হবে। পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে এই বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকতে চলবে সচেতনতামূলক প্রচার। পোস্তর বীজ কেউ বুনলেই যেন খবর দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে জেলার স্যাটেলাইট ও ড্রোন ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে বেআইনি পোস্ত চাষে নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের বক্তব্য, লুকিয়ে-চুরিয়ে পোস্ত চাষ আটকাতে আকাশপথ থেকে নজরদার কাজে আসবে। আবগারি দপ্তর সূত্রে খবর, প্রতিবছর জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর-সহ কিছু এলাকায় অজয়ের চরে পোস্ত চাষ করে স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। এলাকার মাটি ও আবহাওয়া পোস্ত চাষের উপযোগী। ফলন তাই ভাল হয়। সে জন্য এই অঞ্চলকে বেছে নেয় এইসব মাফিয়ারা। জামুড়িয়ার লালবাজার, বীরকুলটি, দরবারডাঙা, কুমারডিহি, পাণ্ডবেশ্বরের রামনগর গ্রাম লাগোয়া অজয়ের চর–সহ বেশ কিছু অঞ্চলে নিয়মিত পোস্ত চাষ হয়। যার জেরে নেশার প্রকোপ, মাফিয়া দৌরাত্ম্যও বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ।
[থেকে গেল সুর, সুরলোকে গিরিজা দেবী]
১৯৮৫ সালের ‘নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস’ আইনে পোস্ত চাষকে অবৈধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পোস্তর খোল থেকে আফিম পাওয়া যায়। যা নেশার দ্রব্য হিসাবে ব্যবহার হয়। এই চাষে যুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে ১০-২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। যে জমিতে পোস্ত চাষ করা হবে সেই জমির মালিককেও ওই একই সাজা ভুগতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই আইন কার্যত প্রয়োগ হয় না। তবে সিদ্ধান্ত হয়েছে পোস্ত চাষি ও তাদের মদতদাতাদেরও বিরুদ্ধেও এবার আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কলকাতা জোনাল শাখার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের অধিকর্তা এম কে মণ্ডল জানান, ‘‘দুষ্কৃতীরা সব সময় খাস জমিতে পোস্ত চাষ করে। অভিযান চালিয়ে পোস্ত গাছ নষ্ট করলেও যারা চাষ করছে তাদের নাগাল মেলে না।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.