ফাইল ছবি।
অভিরূপ দাস: একরত্তির কোভিড (COVID-19) রিপোর্ট নেগেটিভ। কিন্তু জ্বর কমছে না। কাগজে লেখা ‘নেগেটিভ’টাই যে সত্যি নয়। রাজ্যের একাধিক শিশুর ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে। করোনা থাকলেও রিপোর্ট আসছে নেগেটিভ। এমনটাই জানিয়েছেন কোভিড মনিটরিং টিমের সদস্যরা। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে?
চিকিৎসকরা বলছেন, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে RT-PCR টেস্ট করার প্রক্রিয়াই এর কারণ। সরু একটা কাঠি। চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম রেসপিরেটরি মেটেরিয়াল। সেটায় একবার নাকের ফুটো দিয়ে, আরেকবার গলা দিয়ে ঢুকিয়ে লালারস সংগ্রহ করা হয়। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই টেস্ট করার ঝক্কি অনেক। স্থিরভাবে বাচ্চাকে বসিয়ে রাখা দুষ্কর। তার ফলে অনেক সময়েই পর্যাপ্ত পরিমাণে লালারস নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে সঠিক রিপোর্টও ঠিক আসে না।
‘ডা. বিসি রায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইন্সটিটিউট অফ পেডিয়াট্রিকস’-এর শিশু শল্য বিভাগের চিকিৎসক তথা রাজ্য কোভিড মনিটরিং টিমের সদস্য ডা. সুজয় পালের বক্তব্য, ‘‘অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে একটি বাচ্চার মধ্যে করোনার সমস্ত লক্ষণ আছে। কিন্তু তার কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে। আদতে এটি ফলস নেগেটিভ।’’ এমতাবস্থায় ৪৮ ঘন্টা পর আবার টেস্ট করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
করোনার তৃতীয় ঢেউ শিয়রে। খুদেদের টিকাকরণ যেহেতু এখনও হয়নি আশঙ্কায় অভিভাবকরা। বড়দের মতো অনেক কচিকাঁচারও রয়েছে নানান কো-মর্বিডিটি। ডা. সুজয় পালের বক্তব্য, কোনও বাচ্চার যদি তিন-চারদিনের বেশি জ্বর থাকে, কিংবা ডায়েরিয়ার উপসর্গ থাকে বাড়িতে বসে থাকবেন না। উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৫-৭ দিনের মধ্যে টেস্ট করান। অনেক ক্ষেত্রেই বাড়ির বড়দের থেকেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে খুদেদের মধ্যে। মা আর শিশু একই সঙ্গে করোনা আক্রান্ত হওয়ার উদাহরণ ভূরি ভূরি।
চিকিৎসকরা বলছেন, কোলের শিশু করোনা আক্রান্ত হলেও তাঁকে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে কোনও বাধা নেই। সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠছে শিশুরা। তবে গুরুতর অসুস্থ হলে বাড়িতে রাখা বিপজ্জনক। চিকিৎসকরা বলছেন, শ্বাসপ্রশ্বাস দেখলেই বোঝা যায় শিশুর ফুসফুসের কতটা ক্ষতি হয়েছে। কীরকম? ডা. সুজয় পালের ব্যাখ্যা, ২ মাসের নিচে বাচ্চা মিনিটে ৬০ বারের বেশি শ্বাসপ্রশ্বাস নিলেই সাবধান হতে হবে। ৫ বছরের উপরের শিশুদের ক্ষেত্রে মিনিটে ৩০ বারের উপর শ্বাস নেওয়া মারাত্মক।
এমনটা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলছেন তিনি। বাচ্চাদের মাস্ক পরা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধন্দ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO জানিয়েছে, ৬ বছরের উপরের শিশুদের মাস্ক পরতে হবে। তার নীচে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। যদিও ‘ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন অফ পেডিয়াট্রিক’-এর দাবি, বয়স দু’বছর হলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন, বড়রা যখন তখন মাস্ক খুলে ফেললেও বাচ্চারা তা করে না। “মাস্ক মেইনটেইন”-এর মানদণ্ডে শিশুরাই এগিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে। তাঁর পরামর্শ, একদম সদ্যোজাতদের মাস্ক পরানো উচিত নয়। তবে বয়স দু’বছর হলে মাস্ক পরাতে কোনও অসুবিধা নেই। কারণ করোনার মাস্ক স্রেফ কোভিড-১৯ নয়, প্রতিহত করছে অন্যান্য ভাইরাসও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.