অভিরূপ দাস: বাড়ির কাছে আবর্জনা, জঞ্জাল, মজা পুকুর৷ বড় একটা পা পরে না কারও৷ নিরিবিলি এই পরিবেশ তার পছন্দের৷ পোকা, কুনো ব্যাঙ খেতে এখানেই বাসা৷ ছোট ছোট সেই মাটির গর্ত দেখলে পা সরান৷ গর্তে লুকিয়ে শহরের নতুন আতঙ্ক৷
ইতিমধ্যেই সুদূর লাতিন আমেরিকা থেকে ঢুকে পড়েছে মেদিনীপুরে৷ মোটে ১০৮ কিলোমিটার পেরিয়ে পরের গন্তব্য কলকাতা নয় তো?
কলকাতার কাছে নদী নেই ভেবে পাশ কাটাচ্ছেন যাঁরা, ভয় কাটেনি তাঁদের৷ বাড়ির আশপাশে জঞ্জালের স্তূপ৷ কাছেই পুকুর রয়েছে৷ সাধের বাগান পরিষ্কার হয় না অনেকদিন৷ তবে ঘরের টিকটিকির পিছু নিয়ে ঢুকে পড়তেই পারে ট্যারান্টুলা৷
“মূলত পোকামাকড় খায় এই ধরনের মাকড়শা৷ বৃষ্টি কম হলে পোকামাকড়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে তারা৷ দেওয়ালের টিকটিকি, কিংবা ছোট পতঙ্গের টানেই ঢুকে পড়ে গৃহস্থ বাড়িতে” জানিয়েছেন বিজ্ঞানী শঙ্কর তালুরদার৷ রাতে ঘুমের মধ্যে যদি দেখেন রোমশ কিছু হেঁটে গেল বুকের ওপর দিয়ে, চটপট আলো জ্বালান৷ অজান্তেই হয়তো থেরাফোসিডা থুড়ি ট্যারান্টুলা ঢুকে পড়েছে৷
আফ্রিকার আতঙ্কে ইতিমধ্যেই ভুগছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার মানুষ৷ জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানী শঙ্কর তালুকদার জানিয়েছেন, সাধারণত জলার ধারে বাসা বাঁধে এই জীব৷ নরম মাটিতে গর্ত করতে সুবিধে৷ ডেবরায় কংসাবতীর ধার তাই পছন্দ হয়েছে আটপেয়েদের৷ তবে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে খাদ্যাভাস, বাসস্থান৷ শহরে পুরনো গ্যারেজ, ঘাসজমি থেকে বেরোতেই পারে ট্যারান্টুলা৷
মাকড়শা দেখলেই মারতে বারণ করছেন বিজ্ঞানীরা৷ “এই মাকড়শার জন্য অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷ ট্যারান্টুলার কামড়ে মৃত্যু হয় না৷ এর কামড় অনেকটা মৌমাছির কামড়ের মতো৷ শরীরে অ্যালার্জির মতো হয়৷” কিন্তু আচমকা কামড়ে আতঙ্কে ভোগেন অনেকেই৷ ভয়টা বোধহয় ট্যারান্টুলার রূপে৷ এমনিতেই কদাকার দেখতে মাকড়শা৷ সেই জাতিতে ট্যারান্টুলা আরও ভয়ংকর৷ ধূসর খয়েরি৷ পায়ের ডগায় নখের মতো হুল৷ কালো কালো ছোপ৷ বাথরুমের সিস্টার্ন অথবা স্প্লিট এসির কোণ থেকে উঁকি দিলে গা শিউরে উঠবে যে কারও৷
আর পাঁচটা মাকড়শার মতো নয় ট্যারান্টুলা৷ শুঁয়োপোকার গায়ে যেমন রোঁয়া, ট্যারান্টুলার আটটা পা জুড়েও তাই৷ না কামড়ালেও এই রোঁয়া যেখানেই লাগবে চুলকোতে শুরু করবে৷ বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, সাধারণত লম্বায় ১০ সেন্টিমিটার হয় এই প্রজাতির মাকড়শা৷ আটটা পা লম্বা করলে গোল ডিনার প্লেটের সমান৷ ঘরের ভেতর বাসা বাঁধে না এরা৷ মাটির ভেতরে অন্ধকারের বাসা এদের পছন্দের৷ খুব আলো, লোকজন পছন্দ করে না ট্যারান্টুলা৷ নির্মীয়মাণ বহুতল অথবা পরিত্যক্ত বাড়ি থাকলে সেখানে বাসা বাঁধতেই পারে ট্যারান্টুলা৷ সেক্ষেত্রে পরিবেশ পরিষ্কার রাখার নিদান দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
ঘরে ট্যারান্টুলার প্রবেশ আটকাতে চাইলে রাখা যেতে পারে ভিনিগার স্প্রে বা পিপারমিন্ট স্প্রে৷ ভিনিগারের গন্ধ সহ্য করতে পারে না ট্যারান্টুলা৷ গৃহস্থ বাড়িতে আরেকটি জিনিস সহজলভ্য৷ কেরোসিন তেল৷ স্প্রে-র বোতলে কেরোসিন তেল রেখে দিলেই হবে৷
বর্ষা এখনও আসেনি শহরে৷ কম বৃষ্টিতে পোকামাকড়ও কম জন্মায়৷ পোকামাকড়ের খোঁজেই বেড়োবে তারা, এই সময়টাই সাবধান৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জাল বিছাচ্ছে ট্যারান্টুলা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.