সন্দীপ চক্রবর্তী: দেশে সেরার পুরস্কার ছিনিয়ে নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বাংলার তৃণমূল পরিচালিত সুন্দরবন এলাকার এক পঞ্চায়েত। দেশের আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে সেরা হল পাথরপ্রতিমার দিগম্বরপুর। শনিবার দেশের সেরা গ্রাম পঞ্চায়েত হিসাবে দিগম্বরপুরের নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়াও বর্ধমান, বীরভূম ও পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি বিশেষ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন কর্মসূচির জেরেই এই সাফল্যে উল্লসিত শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এদিন বেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে দেশের সেরা পঞ্চায়েতের সম্মান পাওয়ার কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লির শাসকরা বাংলার সরকারকে অপচ্ছন্দ করে। গ্রামীণ উন্নয়নের পাওনা ও বরাদ্দ টাকা আটকে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বঞ্চনা করে বাংলাকে। তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গ্রামীন উন্নয়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে সত্যিই নজিরবিহীন কাজ করেছে তার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হল।” শনিবার নবান্নে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলার পঞ্চায়েত দেশের মধ্যে সেরা হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বাংলা সেরা। এই সম্মানের জন্য আমরা গর্বিত। বাংলার যেখানে যেখানে পঞ্চায়েত ভাল করেছে তাদের আমার অভিনন্দন।’
[কমিশনের সঙ্গে বিবাদে সর্বদল বৈঠক বয়কট, ফের হাই কোর্টে যাচ্ছে বিজেপি]
এর আগে একশো দিনের কাজ, প্রাধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা-সহ পাঁচটি ক্ষেত্রে গ্রামের উন্নয়নের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে এই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছে বলেও সুব্রতবাবু দাবি করেছেন। বিরোধী বিজেপির নাম না করে তাঁর সরস মন্তব্য, “এখানে কর্মীরা যতই মিথ্যা অভিযোগ ও বিভ্রান্তিকর প্রচার করুক না কেন কাজের জন্য দিল্লির প্রশাসকরা তৃণমূল সরকারকে সেরার সেরা পুরস্কার দিতে বাধ্য হচ্ছে।” স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের মুখে সেরার শিরোপা শাসক তৃণমূলকে আরও এগিয়ে রাখবে। মূলত গ্রামীণ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নানা কর্মসূচি সঠিক রূপায়ণের ফলেই এই সাফল্য এসেছে বলে মনে করছে পঞ্চায়েত দপ্তর। পঞ্চায়েতমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও আরও বেশ কয়েকটি মাপকাঠিতে দেশের প্রায় আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে সেরা এ রাজ্যের পাথরপ্রতিমা ব্লকের দিগম্বরপুর। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সেরা তিনটি পঞ্চায়েতকে পুরস্কার দেওয়া হয়। তার মধ্যে প্রথম পাথরপ্রতিমা ব্লকের দিগম্বরপুর। এছাড়াও হাওড়ার বালির জগাছা ব্লকের চেঙ্গাইল গ্রাম পঞ্চায়েত, পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের তরুরই গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ আরও বেশ কয়েটি গ্রাম পঞ্চায়েত বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে। বিগত বছরগুলিতে রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তরের কাজকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। আর নির্বাচনের মুখে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রাজ্যকে এই স্বীকৃতি বিপাকে ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে। একাধিকবার রাজ্যের বিশেষত গ্রামাঞ্চলে অনুন্নয়নের অভিযোগে সরব হয়েছে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি। এবার খোদ দিল্লির তরফে এই সেরার স্বীকৃতি তৃণমূল কংগ্রেসকে নির্বাচনে অনেকটাই এগিয়ে রাখল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তণমূল শিবিরের দাবি, গত সাত বছরে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির জেরে আমূল বদলে গিয়েছে গ্রাম বাংলার ছবি। একশো দিনের কাজে একাধিকবার সেরার শিরোপা পেয়েছে এ রাজ্য। কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের কাজ প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও নিজ উদ্যোগে একশো দিনের কাজ প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান যেমন বেড়েছে, তেমনি উন্নয়নের নিরিখে সেরার তালিকায় উঠে এসেছে গ্রামের মানচিত্র। বিগত বছরগুলিতে গ্রামে গ্রামে পাকা রাস্তা, নিকাশি ব্যবস্থা, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেমন হয়েছে তেমনি গ্রামে গ্রামে পৌঁছেছে বিদ্যুৎ। ফলে আমূল বদলে গিয়েছে গ্রামের চিত্র।
[পঞ্চায়েত ভোটের আগে উলুবেড়িয়া থেকে প্রচুর বোমা উদ্ধার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.