ছবি: প্রতীকী
ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: পঞ্চায়েত ভোটের দ্বিতীয় বলি। বিজয় মিছিলেই খুন হলেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। মৃতের নাম সইফার রহমান। মিছিল চলাকালীন তাঁর সঙ্গে থাকা এক যুবকই সামনেনে থেকে ক্ষুর চালিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। তড়িঘড়ি বারাসত সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় সইফার রহমানের। এদিকে ক্ষুর মারার পর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল আততায়ী যুবক রজব আলি। তবে উপস্থিত তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা তাকে ধরে ফেলে। শুরু হয় বেধড়ক মারধর। পুলিশ এসে উন্মত্ত জনতার হাত থেকে রজব আলিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পথেই মৃত্যু হয় তার। বুধবার বিকেলে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থানার ফলতি বেলিয়াঘাটা এলাকায়।
সোমবার মনোননয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পর বারাসত দুই নম্বর ব্লক অন্তর্গত ফলতি বেলিয়াঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতে কার্যত জয়লাভ করে তৃণমূল। পঞ্চায়েতের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৬টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল ‘জয়ী’ হয়। মঙ্গলবার এলাকার অঞ্চল সভাপতি সইফার রহমান বিজয় মিছিলের ডাক দেন। বুধবার বিকেলে নির্ধারিত সময়ে মিছিল শুরু হয়। জানা গিয়েছে, ফলতি বেলিয়াঘাটা ব্রিজ থেকে মিছিল শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সইফার রহমানের উপরে হামলা চালায় রজব আলি। সে ফলতি গ্রামের বাসিন্দা। মিছিল শুরুর সময় থেকেই সইফার রহমানের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছিল রজব। ফলতি বেলিয়াঘাটা থেকে আমিনপুরের দিকে মিছিল এগোতেই সুযোগ বুঝে অঞ্চল সভাপতির পেটে ক্ষুর চালিয়ে দেয়। রক্তাক্ত সইফার রহমানকে উদ্ধার করে বারাসত সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। দলের অঞ্চল সভাপতির উপরে হওয়া আচমকা আক্রমণে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও রজবকে ধরে ফেলে কর্মী সমর্থকরা। শুরু হয় বেধড়ক মারধর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় রজব আলির। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে চাপানউতোর।
এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এই প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘সিপিএম ও কংগ্রেস শুধু নয়, এই হামলার পিছনে ভারতীয় জনতা পার্টি রয়েছে। যৌথভাবে হামলা চালিয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা এবার চোখ খুলে দেখুন, তৃণমূল কাউকে মারে না। আমাদের কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তাই বলে আমরা রক্তাক্ত করব না। সেই রক্তমাখা জামা নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাব। মানুষ এর জবাব দেবে।’
তৃণমূলের জেলা সভাপতির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপির উপরে ওঠা অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মিথ্যা কথা। শাসনে কোনও বিজেপি সমর্থক আছে কিনা আমার জানা নেই। খুন হয়েছে, তার তদন্ত হোক। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা হবে।’। খুনের অভিযোগ উড়িয়েছেন এলাকার সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য। তিনি এই খুনের নিন্দা করে বলেন, ‘দুঃখজনক ঘটনা। তবে এটি তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পরিণতি। বাংলা এ রাজনীতি আগে দেখেনি।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.