টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: কথায় বলে সুখের পথে সতীন রূপ ‘কাঁটা’ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই আপ্ত বাক্যটি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বাঁকুড়ার ওন্দা বিধানসভা কেন্দ্রের পুলিশোল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা আব্দুল সাত্তার খান। কাঠ ব্যবসায়ী তথা ওই পুনিশোল পঞ্চায়েতের ২০ নম্বর সংসদের বিদায়ী সদস্য আব্দুলের দুই স্ত্রী। বছর পয়ত্রিশের শখের জান বিবি খান আর বছর আঠাশের প্রিয়া খান। এই দুই গৃহবধূই পুনিশোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০ নম্বর সংসদে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। একই আসনে শাসক দলের হয়ে দুই সতীনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলা জুড়ে। দলের টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে তারই অপেক্ষায় রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা বলছেন এই ভোট রঙ্গের বাজারে দুই সতীনের ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’ যে সুপারহিট তা স্বীকার করতেই হয়।
একই আসনের পেছনে একই দলের হয়ে দুই সতীনের মনোনয়ন করার পেছনে আসল কারণটা কী? তা খোঁজ করতেই সবটা স্পষ্ট হল। জানা গেল, বাঁকুড়ার মুসলিম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই পুলিশোল গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন সংখ্যা ২১। তার ২০ নম্বর আসনটি ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় নির্বাচনী লড়াইয়ের ক্ষেত্রে গেরো পড়ে গিয়েছে বিদায়ী সদস্য সাত্তারের পথে। তবে তিনি না সুযোগ পেলেও দলের নির্দেশ মোতাবেক এই আসনে দলের প্রতীক পাওয়ার অধিকারী তাঁর স্ত্রী। দলের নিয়ম মেনে মনোনয়ন পর্ব শুরু হওয়ার পরেই ওন্দা বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দেন সাত্তারের দ্বিতীয় স্ত্রী প্রিয়া। প্রিয়া একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। তৃণমূল কংগ্রেসের পুলিশোল অঞ্চল সভাপতি রেজাউল হক মন্ডল বলছেন, “মনোনয়ন জমা দেওয়া পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। মনোনয়ন পর্বের শেষ দিন ব্লক প্রশাসন কার্যালয় থেকে সূত্র মারফত খবর পাই নিয়ম মেনে প্রিয়া বিবির জাতিগত শংসাপত্র জমা দেওয়া হয়নি। সেই খবর দেওয়া হয় প্রিয়া বিবিকে। প্রিয়া বিবি জানান তখনও পর্যন্ত তিনি শংসাপত্র হাতে পাননি। সতীনের ভোট লড়ার পথে শংসাপত্রের কাঁটা দেখে দলীয় কার্যালয় থেকে শংসাপত্র নিয়ে হাজির হন সাত্তারের প্রথম পক্ষের স্ত্রী শখের জান বিবি খান।
বছর পয়ত্রিশের ওই গৃহবধূ সতীনের আটকে পড়ার সুযোগ নিয়ে ভোটের ময়দানে নামার আগ্রহ দেখান। মনোনয়ন পর্বের শেষ দিনে তাঁকে দলের হয়ে মনোনয়ন জমা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তবে সতীনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার খবর থেকে কোমর বেঁধে আসরে নামেন প্রিয়াও। তিনিও শেষ বেলায় তাঁর জাতিগত শংসাপত্র জমা দেন ব্লক উন্নয়ন দপ্তরের কার্যালয়ে। আর তারপর থেকেই দলের প্রতীক পাওয়ার জন্য লড়াই শুরু হয়েছে দুই সতীনের। সাত্তার বাবু বলছেন, “বিপাকে পড়েছি আমি। এখন ঘরে ঢুকলেই দুই স্ত্রীর একটাই বায়না। ‘দলের প্রতীক’! চৈত্র মাসের সেলের বাজারের কথাও ভুলে গিয়েছেন তাঁরা।” স্থানীয়রা বলছেন, গৃহস্থের দুই সতীন যখন ভোটের ময়দানে তখন হাওয়া গরম হবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। হাইকোর্টের নির্দেশে যখন ভোটের ভাগ্য ঝুলছে তখন দলের টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে এই দুই সতীনের তুমুল ঝঞ্ঝাটে পুলিশোল সরগরম। ঝঞ্ঝাট কাটিয়ে কার হাতে নিষ্কন্টক ‘ঘাসফুল’ ফোটে সেটাই এখন দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.