বাবুল হক, মালদহ: দলের বিরুদ্ধেই কার্যত জেহাদ ঘোষণা কংগ্রেসের বিদায়ী প্রধানের। হাত চিহ্নের প্রতীকও নিতে নারাজ তিনি। দলের স্থানীয় নেতাদের ‘শিক্ষা’ দিতে এবার নির্দল হিসাবেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হলেন কালিয়াচকের তরুণ কংগ্রেস নেতা আনজার আলি। তবে গ্রাম সংসদ বা সমিতিতে নয়, তিনি জেলা পরিষদের একটি আসনে মনোনয়ন পেশ করেছেন।
আনজার আলির কথায়, “দল আমাকে টিকিট দেয়নি তা নয়, আমি দলের কাছে টিকিট চাইনি। কংগ্রেসের প্রতীক ছাড়াই এই নির্বাচনে আমি জিততে পারব। এলাকার মানুষের উপর আমার আস্থা রয়েছে।” কেন হঠাৎ বেঁকে বসলেন? গয়েশবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারপ্রাপ্ত কংগ্রেস প্রধান আনজার আলি বলেন, “এখানকার কংগ্রেস নেতারা পঞ্চায়েতে লুটতরাজ চালাতে চেয়েছিলেন। সরকারি অর্থ তাঁরা লুটেপুটে খেতে চাইছিলেন। আমি তাঁদের উপেক্ষা করেই উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে গিয়েছি। গোটা পঞ্চায়েতের অলিগলিতে পাকা রাস্তা তৈরি করেছি। যার কৃতিত্বের দাবিদার আমিই, কখনওই কংগ্রেস নয়। কংগ্রেসের দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তা করতেই আমি নির্দল প্রার্থী হয়েছি।”
মালদহের কালিয়াচকের সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই গয়েশবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত। কংগ্রেসের শক্তিশালী ঘাঁটি বলে পরিচিত এই পঞ্চায়েতে বরাবরই কংগ্রেস ক্ষমতায় থেকেছে। শুধুমাত্র ২০০৮ সালে এই পঞ্চায়েত দখল করে সিপিএম। তারপর ২০১৩ সালে ফের ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। এবার এলাকা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে বাম শিবির। সিপিএম কোনও প্রার্থীই দেয়নি। ত্রিস্তরেই সমস্ত আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। ফলে কংগ্রেস-তৃণমূল লড়াইয়ের আশঙ্কা করছে রাজনৈতিকমহল। কিন্তু কংগ্রেসের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলেরই ‘নির্দল’ আনজার আলি। গয়েশবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৯টি। গত নির্বাচনে ১৭টি আসনেই জিতেছিল কংগ্রেস। একটি করে আসন পেয়েছিল তৃণমূল ও সিপিএম। এবার আনজার অনুগামী গতবারের জয়ী বেশ কয়েকজনকে গ্রাম সংসদে প্রার্থী করেনি স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। আর এতেই অভিমান করে দলের স্থানীয় নেতাদের ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছেন আনজার। তিনি নিজে মালদহ জেলা পরিষদের ৩৫ নম্বর সুজাপুর আসনে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। এবং গ্রাম সংসদের প্রায় প্রত্যেকটি বুথেই অনুগামীদের নির্দল হিসাবেই দাঁড় করিয়েছেন তিনি। ফলে এলাকায় রীতিমতো ব্যাকফুটে কংগ্রেস বলে তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করছে।
গয়েশবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আনজার আলি কয়েক বছর ধরে কংগ্রেসের অঞ্চল কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন। সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক ইশা খান চৌধুরির নির্দেশে মাসকয়েক আগে আনজারকে অঞ্চল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দলে ‘অপমানিত’ হয়েই বদলা নিতে আসরে নেমে পড়েছেন গয়েশবাড়ির প্রধান আনজার আলি বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সুজাপুর আসনের জেলা পরিষদ প্রার্থী তথা বিদায়ী প্রধান আনজার আলি অবশ্য দাবি করেন, “এখানে কংগ্রেস তৃতীয় স্থানে থাকবে। নির্দলের সঙ্গেই লড়াই হবে তৃণমূলের।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.