ফাইল ছবি
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: তৃণমূলের জেলা সভাপতি দাবি করছেন, দলে গোষ্ঠী-কোন্দলের খবর শুধুই রটনা৷ পঞ্চায়েত ভোটের লড়াইয়ে নেমে ব্লক সভাপতি জোর গলায় দাবি করেছিলেন, জামুড়িয়ায় তৃণমূলের কোনও দলীয় বিবাদ নেই৷ সবই মিডিয়ার গুজব৷ কিন্তু, মনোনয়ন জমা শেষে দেখা গেল, চূড়ান্ত গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে তিনি নিজেই পড়েছেন বিপাকে৷ জামুড়িয়ার ব্লক সভাপতি মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে প্রদীপ পঞ্চায়েত সমিতির যে আসন থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন, সেখানে তাঁরই উলটোদিকে তৃণমূলেরই পাঁচ কর্মী প্রার্থী হয়েছেন৷ ফলে, জামুড়িয়ায় যেখানে কিছু অংশে বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই হবে তৃণমূলের সেখানে বেশিরভাগ অংশে ভোট হবে তৃণমূল বনাম তৃণমূলে। যার থেকে বাদ নেই খোদ ব্লক সভাপতির আসনটিও।
মনোনয়নের প্রথমদিন থেকে জামুড়িয়ায় ছিল তৃণমূলের সাজ সাজ রব জামুড়িয়ায়। জামুড়িয়ার বাহাদুরপুর মোড়ের কাছে বিডিও অফিসের বাইরে বাঁধা হয়েছিল ম্যারাপ। চলেছিল ৫০০ থেকে ৭০০ লোকের প্রতিদিন খাওয়া দাওয়া৷ কিন্তু যার জন্য এত আয়োজন সেই পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন তোলা ও জমা দেওয়া হয় শেষদিন সোমবার অর্থাৎ ৯ এপ্রিল। ব্লক সভাপতি মেনে নিয়েই বলেছিলেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত শীর্ষ নেতৃত্বের৷ কিন্তু তাও শেষরক্ষা হয়নি৷ গ্রাম-পঞ্চায়েতের ৯৩টি আসনে প্রার্থী হয়েছেন ১৫৮ জন আর ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী হয়েছেন ৪০ জন৷ যার মধ্যে বিরোধীর থেকে তৃণমূলের সংখ্যাই বেশি৷
মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় জামুড়িয়া দু’নম্বর ব্লকের সভাপতি। এবার তিনি শ্যামলা পঞ্চায়েত সমিতির ১৩ নম্বর বুথ থেকে দাঁড়িয়েছেন। জামুড়িয়া পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার পর তৃণমূল বোর্ড গঠন করলে সম্ভাব্য তিনিই সমিতির সভাপতি হওয়ার দাবিদার। জানা গিয়েছে, মুকুল বাবুর বাড়ি কেন্দা পঞ্চায়েত এলাকায়। কিন্তু তিনি সেখানে তিনি ভোটে দাঁড়াননি৷ সংরক্ষণের গেরোয় তাঁর প্রার্থী হওয়ার অসুবিধা ছিল তা কিন্তু নয়৷ সম্ভবত গোষ্ঠী-কোন্দল এড়াতে তিনি শ্যামলা পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী হয়েছেন। শ্যামলা আসনে পঞ্চায়েত সমিতির জন্য এবারের প্রার্থী হয়েছেন মনোজ মণ্ডল। তিনি সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। এছাড়াও সনজিত মণ্ডল, সিদ্ধার্থ রাণা, বাপ্পা ঘোষ, পার্থ মণ্ডল, রমেশ ঘোষরা শ্যামলা পঞ্চায়েত সমিতির জন্য ভোটে দাঁড়িয়েছেন। এরা সকলেই তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে খোদ দলের ব্লক সভাপতিকেও পাত্তা দিচ্ছেন না পার্টি কর্মীরা। দলের অনুমোদন না পেলে প্রার্থী পদে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছিল জেলা কমিটির পক্ষ থেকে। দলের শৃঙ্খলা না মানলে শাস্তির কোপে পড়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। ব্লক সভাপতি বলেন দল তাঁকে অনুমোদন দিয়েছে তাই তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন। দলীয় প্রতীক একজনকেই দেওয়া হবে। সেই প্রতীক তিনিই পাবেন। তাঁর মতে মনোনয়ন প্রত্যাহারে শেষদিন পর্যন্ত নিজেদের ভুল সংশোধন করে অনেকেই প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করবেন।
জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন জানান, শাসকদলের প্রার্থী হওয়ার জন্য অনেক প্রত্যাশী রয়েছে। কারণ তাঁরা জানেন ভোটে দাঁড়াতে পড়লেই জয় নিশ্চিত। এবার সংরক্ষণ রয়েছে বেশিরভাগ আসন। সামান্য মনোমালিন্য হলেও সেটা কোনও জটিল আকার ধারণ করবে না বলে তিনি মনে করেন।
জামুড়িয়ায় গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে ১০টি। ১০টি এখন তৃণমূলের দখলে৷ তবে বেশ জটিল অবস্থায় রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে ২৩টি ও দু’জন রয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য। সবটাই তৃণমূলের দখলে। কিন্তু এই সহজ সমীকরণেও শাসক দলের চিন্তার ভাঁজ রয়েছে কপালে। চিচুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত দখলে রয়েছে নির্দলের, তবে তাঁরা তৃণমূলেরই একাংশ। সমস্যা রয়েছে কেন্দা পঞ্চায়েত সমিতিতেও৷ গতবারের পঞ্চায়েত সভাপতি শান্তনা মণ্ডল টিকিট না পাওয়ায় নিজেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন। আবার বিনাপ্রদ্বন্ধীতায় জয়ীও হয়ে গেছেন। দলীয়ভাবে প্রার্থী টিকিট না মেলায় মনোনয়ন জমা করেছেন জামুড়িয়া পঞ্চায়েতের সহ-সভাপতি উদীপ সিংও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.