সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: বাংলার কংগ্রেস (Congress) নেতৃত্বের উপর দিল্লির (Delhi) হাইকমান্ডের যে আর আস্থা নেই, আবারও পরিষ্কার হল। সূত্রে খবর, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ কর্মসূচিতে রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) যাতে অন্তত একটি বার বাংলার মাটিতেও পা রাখুন, সেটা চেয়ে দিল্লিতে আবারও বার্তা পাঠিয়েছিলেন বঙ্গ কংগ্রেসেরই একটি অংশ। কিন্তু এবারও সেই আর্জিতে ‘মান্যতা’ দেয়নি দিল্লি। এ রাজ্যের নেতৃত্বের উপর ভরসা নেই ও দিল্লিও গুরুত্ব যে দিতে চাইছে না, সেটা বারবার ‘আবদার’ প্রত্যাখ্যানে স্পষ্ট হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এআইসিসি (AICC) সূত্রে খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে সখ্যর বার্তা দিতে সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) নির্দেশে প্রদেশ নেতাদের আবদার পত্রপাঠ বাতিল করে দেয় হাইকমান্ড। এরই মধ্যে টুইটে কংগ্রসকে আক্রমণ করে সিপিএম (CPM) প্রশ্ন তুলেছে, ভারত জোড়ো না কি সিট জোড়ো? কেরলে ১৮ দিন আর উত্তরপ্রদেশে দু’দিন! বলা হয়েছে, বিজেপি-আরএসএসকে মোকাবিলায় অদ্ভুত পথ! এভাবে কংগ্রসের লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হল কার্যত। ওই টুইটের কমেন্টে অবশ্য কেউ কেউ পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে অমিত শাহর ছবি তুলে ধরেছে।
কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর যাত্রার পরের পর্যায়ে দেশের পশ্চিম থেকে পূর্বেও যাত্রা হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে গুজরাত থেকে শুরু করে বাংলা হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত হাঁটতে পারেন রাহুল গান্ধীরা। কিন্তু কার্যত রাহুলের সফরে বাদ যাচ্ছে বাংলা। যদিও শুরুর মাত্র পাঁচদিনেই মূলত দাক্ষিণাত্যে ভালই সাড়া ফেলেছে কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা। তামিলনাড়ুতে ‘বন্ধু’ মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্তালিনের হাত থেকে জাতীয় পতাকা নিয়ে শুরু হয়েছে কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা।
দেশব্যাপী কর্মসূচির ঘোষিত লক্ষ্য আরএসএস ও বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরোধিতা করে দেশ-দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করা। প্রকাশ্যে না বললেও এই যাত্রার আরও এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য রয়েছে কংগ্রেসের। দু’বছর বাদেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে নিজেদের জুড়ে নেওয়া। কিন্তু সব ইচ্ছা তো সব সময় পরিকল্পনামাফিক মিলে যায় না। ডিএমকে-র সঙ্গে সখ্য থাকায় তামিলভূমিতে কংগ্রেসের যাত্রায় রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে কোনও বিরোধ তৈরি হয়নি।
তবে যাত্রা কেরলে ঢুকতেই রাজ্যের শাসক বামেদের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিরোধের ফলে টুকটাক মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ছোটখাটো সমস্যা। আগের দিন সিপিআই(এম)-এর ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর আপত্তি-প্রতিবাদে তিরুবনন্তপুরমের স্কুলের মাঠে ঢুকতে পারেনি রাহুলদের কন্টেনার। যেখানে রাত্রিবাস করছেন যাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা। বাধ্য হয়ে স্কুল চত্বরে রাত কাটাতে হয় তাঁদের। আর এদিন টুইটে আক্রমণ।
পশ্চিমবঙ্গেও শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের মতবিরোধ থাকলেও সোনিয়া-মমতা সম্পর্ক মধুর। কোনওভাবেই তাতে যেন কোনও প্রভাব না পড়ে, সেদিকে কড়া নজর দিয়েছেন কংগ্রেস দলনেত্রী। গত বিধানসভা ভোটেও দেখা গিয়েছিল, মমতার বিরুদ্ধে দিল্লির নেতারা তেমন প্রচারে নামেননি। প্রচারে এলেও তা ছিল নাম কা ওয়াস্তে। এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে হাত আর মাত্র বছর দেড়েক। প্রদেশ নেতৃত্ব বুঝতে রাজি না হলেও অভিজ্ঞ হাইকমান্ড খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে পাশে না পেলে মোদি জমানা শেষ করা সম্ভব নয়।
এছাড়া বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কংগ্রেস দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ব্যক্তিগত সম্পর্কও খুবই কাছের। এই দুইয়ের মিশেলেই বাংলায় যাত্রা নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেননি ম্যাডাম, এমনটাই বক্তব্য সর্বভারতীয় এক কংগ্রেস নেতার। বক্তব্য, কোনও কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুণ্ন হয়ে যান, তা কিছুতেই চান না সোনিয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.