সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একুশের পর চব্বিশেও বাংলায় পর্যদুস্ত বিজেপি। কিছুটা মুখরক্ষা করেছে শুধুমাত্র উত্তর। গতবার একচেটিয়া আধিপত্য ছিল বিজেপির। ৮ আসনের মধ্যে ৭ এসেছিল তাদের দখলে। এবার গেরুয়া ঝড়ের ছবিটা অনেকটাই ফিকে। মোদি-শাহদের দখলে থাকা সাতটির মধ্যে ৬টিতে জয় এসেছে। তবে কমেছে মার্জিন। একটিতে ফুটেছে ঘাসফুল।
রাত নটা পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, কোচবিহারে ৪০ হাজার ভোটে হেরেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক। আলিপুরদুয়ারে মাত্র ৭০ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা। জলপাইগুড়িতে প্রায় ৪০ হাজার ভোটে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়। এক লক্ষের কিছু বেশি ভোটে জিতেছেন দার্জিলিংয়ের রাজু বিস্তা। জিতেছেন রায়গঞ্জের বিজেপি প্রার্থী কার্তিক পালও। উত্তর মালদহ ধরে রেখেছেন খগেন মুর্মুও। প্রায় ১০ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বালুরঘাটের বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদারও। তবে তৃণমূলের জগদীশ বর্মা বসুনিয়া হারিয়েছেন বিজেপির নিশীথকে। শুধু কোচবিহার দখল নয়, ভোটও বাড়িয়েছে তৃণমূল। কোন ম্য়াজিকে বিপর্যয়ের মাঝেও ৫ আসন ধরে রাখল গেরুয়া শিবির? কোন অঙ্কেই বা নিশীথ প্রামানিকের মতো হেভিওয়েটকে গোল দিল তৃণমূল?
কোচবিহারে বড় ফ্যাক্টর রাজবংশী ভোট। সেই কথা মাথায় রেখে রাজবংশী সমাজের প্রতিনিধি অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেই দলের প্রতিই রুষ্ট ছিলেন তিনি। প্রার্থী নিশীথকেও তাঁর পছন্দ ছিল না। প্রকাশ্যেই সে কথা জানিয়েছিলেন। মনে করা হচ্ছে, তিনি ও তাঁর অনুগামীদের ভোট গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতেই। উপরন্তু দলের পুরনো কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল দলীয় কর্মীদের। তারই প্রতিফলন পড়েছে ভোটবাক্সে।
অনেক চেষ্টা করেও বিজেপিকে আলিপুরদুয়ার থেকে সরাতে পারল না তৃণমূল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লাকে এবার এই কেন্দ্রে টিকিট দেয়নি বিজেপি। আর সেই কারণেই এই কেন্দ্রে এবার জিততে জিততেও তৃণমূল শেষ হাসি হাসতে পারল না বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। উল্লেখযোগ্যভাবে, নাগরাকাটা বিধানসভা যেখানে জন বার্লার বাড়ি সেই বিধানসভাতে বিজেপিকে পেছনে ফেলেছে তৃণমূল। জন বার্লার কারণেই ওই বিধানসভায় তৃণমূল বিজেপির থেকে বেশি ভোট পেয়েছে বলেও দাবি অনেকের। বাকি সব বিধানসভাতে লিড রেখেছ বিজেপি। তৃণমূলের চা সুন্দরী প্রকল্প, সংগঠন কোনও কিছুই কাজ করেনি চাবলয়ে। অভিযোগ, জমির পাট্টা নিয়ে নাখুশ ছিলেন চা বলয়ের শ্রমিকরা। এই সমীকরণেই জলপাইগুড়িতে মাত দিয়েছে বিজেপি।
এবার পাহাড়ে বিজেপির পথের কাটা ছিল অনেক। তাদের মধ্যে অন্যতম কার্শিয়াংয়ের বিদ্রোহী বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা অন্যতম। তিনিই নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার আগে থেকে রাজু বিস্তার বিরোধিতা করে ভূমিপুত্র প্রার্থীর দাবিতে সরব ছিলেন। এবং দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন। পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশের দাবি, গুরুং দিল্লিতে দরবার করে চেয়েছিলেন তাই প্রার্থী পরিবর্তনের পরম্পরা ভেঙে, দলের আভ্যন্তরীণ ক্ষোভ উপেক্ষা করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব রাজু বিস্তাকে টিকিট দেন। কেন ঘরে-বাইরে বিরোধিতা দেখেও গুরুং রাজু বিস্তাতেই ভরসা রেখেছেন? পাহাড়ের বিভিন্ন মহলে যে কথাটি বেশ চালু রয়েছে সেটা হলো রাজু বিস্তা মানেই বিমল গুরুং। যে কারণে রাজু বিস্তাও প্রকাশ্যে গুরুংকে রাজনৈতিক গুরু দাবি করেছেন। ঘনিষ্ঠতার সুবাদে গুরুং চালকের আসনে থাকতে রাজুকে চেয়েছেন। বাদবাকি যে বিরোধিতা ছিল তিনি জানতেন জাতিসত্তা ও গোর্খাল্যান্ডের আবেগের সামনে কিছুই টিকবে না। অজয় এডওয়ার্ডের সমর্থন থাকলেও কংগ্রেস-বাম প্রার্থী মুনীশ তামাং মোটেও ফ্যাক্টর হবেন না। তবে ভোটের ব্যবধান যে ২০১৯ সালের মতো থাকবে না, কমবে সেটা টের পেয়ে চাণক্যের স্টাইলে গুরুং আগাম জানিয়ে রেখেছিলেন। সেটাই হয়েছে।
ত্রিমুখী লড়াই দেখেছে রায়গঞ্জ। তৃণমূলের কৃষ্ণ কল্যাণীকে দলেরই অনেকে মেনে নিতে পারেনি। বিশেষ করে তাঁর ‘দলবদলু’ ভাবমূর্তি নিয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে প্রার্থী না করায় দলেরই একাংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরীও খুশি ছিলেন না। ফলে তৃণমূলের লড়াইটা বেশ কঠিন হতে চলেছে। অন্যদিকে বিজেপির সংগঠনের অবস্থা ভালো নয়। এবার নির্বাচনে ফ্যাক্টর হল হিন্দু-মুসলিম ভোট কাটাকাটি। রামমন্দিরের জিগির তুলে হিন্দু ভোট পকেটে পুড়ে নিল গেরুয়া শিবির।
রেল উন্নয়নে বাজি রেখে বালুরঘাট পকেটে পুড়তে মরিয়া সুকান্ত মজুমদার। পালটা রাজ্য়ের একের পর এক জনকল্যাণমূলক প্রকল্পকে হাতিয়ার করে তাঁকে ‘কাঁটে কা টক্কর’ দিচ্ছেন তৃণমূলের বিপ্লব মিত্র। শেষ হাসি কে হাসেন সেটাই দেখার। একইভাবে মালদহ উত্তরও পকেটে পুড়েছে বিজেপি। সবমিলিয়ে বাংলারয় খারাপ সময়েও উত্তর ‘আচ্ছে দিন’ এনেছে বিজেপির জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.