প্রতীকী ছবি।
বিশেষ সংবাদদাতা: এবার ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেণ্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট অর্থাত্ নারেগা প্রকল্পে গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গকে মডেল করছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ নদিয়া, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরে নারেগার সাফল্য ঘুরে দেখার পর কলকাতায় বৃহস্পতিবার এমনই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন দফতরের যুগ্মসচিব অপরাজিতা সারেঙ্গি৷ এদিন রাজারহাটের একটি হোটেলে রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সচিবদের সঙ্গে নারেগা ও পঞ্চায়েতের নানা প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে বৈঠক করেন সারেঙ্গি৷ আর তখনই সুব্রতবাবুকে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে আটটি রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী এবং অফিসারদের কলকাতায় নিয়ে এসে বাংলার নারেগার সাফল্য দেখানো হবে৷ ভিন রাজ্যের মন্ত্রীরা ছাড়াও আসবেন ৩৫জন সচিব পর্যায়ের অফিসার৷ তাঁদের শেখানো হবে, কীভাবে দ্রূত গরিব মানুষের কাছে বাংলার প্রশাসন নারেগাকে পৌঁছে দিয়ে গ্রামীণ উন্নয়ন করেছে৷ একই সঙ্গে এদিন সারেঙ্গি সুব্রতবাবুকে জানান, নারেগা প্রকল্পের সঙ্গে আধারকার্ড জুড়ে দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই৷ কারণ, আধারকার্ডকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না৷
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টও কেন্দ্রের এই আধারকার্ড নিয়ে উদ্যোগের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে রায় দিয়েছে৷ নারেগা এবং আধারকার্ড–দু’টি বিষয় নিয়েই পরে নবান্নে গিয়ে মুখ্যসচিবকে বিষয়টি জানিয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন সচিব৷ বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন রাজ্যের ৪০ শতাংশ মানুষের আধার কার্ড নেই৷ আর সেই কারণে একশো দিনের কাজে আধার কার্ডকে যুক্ত করার কেন্দ্রীয় উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ বস্তুত, কেন্দ্রীয়সচিবের আধারকার্ড নিয়ে এই ঘোষণা একশো দিনের কাজের ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে একটি বড় জয় বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহল৷
‘একশো দিনের কাজ’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে দেশের মধ্যে একাধিকবার প্রথম এবং সেরা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ দফতরের মন্ত্রী হিসাবে সুব্রতবাবু কেন্দ্রের কাছ থেকে এজন্য শংসাপত্রর পাশাপাশি বাড়তি বরাদ্দও ছিনিয়ে এনেছেন বারে বার৷ কিন্তু এদিন বাংলাকে নারেগা প্রকল্পে মডেল ঘোষণার পাশাপাশি একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাড়তি বরাদ্দ মঞ্জুর করার কথাও জানিয়েছেন কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন দফতরের যুগ্মসচিব৷ সুব্রতবাবু জানান, “আগে রাজ্য সরকারকে মাত্র ১৮ কোটি শ্রম দিবসের বেশি কাজ করানো যাবে না বলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে দিয়েছিল৷ কিন্তু এদিন কেন্দ্রীয়সচিব বলে গিয়েছেন, সীমাহীন শ্রমদিবস বাংলার মানুষকে দিতে পারবে রাজ্য সরকার৷ আর সেক্ষেত্রে পুরো টাকাটা দিতে বাধ্য থাকবে কেন্দ্র৷” মন্ত্রী সুব্রতবাবু গরিব মানুষের পাশে মমতার সরকারের থাকার দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যা করে বলেন, যে যতই কুৎসা করুক আমাদের আগের পাঁচ বছরের সরকার যে গ্রামীণ উন্নয়নে প্রচুর কাজ করেছিল ভোটের পর এসে সেকথা স্বীকার করে যাচ্ছেন কেন্দ্রের সচিবরা৷ আসলে পরিশ্রম করলে যে সুফল পাওয়া যায়, নারেগা হল তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ৷ আর এবার আমরা চাইলে ১৮ কোটির পরিবর্তে ২৫ বা ৩০ কোটি শ্রমদিবস তৈরি করে বাংলার গ্রামের গরিব মানুষকে কাজ দিতে পারব৷ পরে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “পর পর তিন বছর পশ্চিমবঙ্গ একশো দিনের কাজে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করল৷ এ এক দারুণ অভিজ্ঞতা৷” মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রায় ১ কোটি ২৭লক্ষ নাগরিক একশো দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত৷ তাঁদের জব কার্ড রয়েছে৷ দফতরের প্রধান সচিব সৌরভ দাস বলেছেন, “এখনও পর্যন্ত একশো দিনের প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৬ হাজার পাঁচশো কোটি টাকা৷ পরিসংখ্যান দিয়ে সচিব বলেছেন, ১ কোটি ২৭ লক্ষ নাগরিককে এই বছরেই একশো দিনের কাজে ২৮.২৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে৷ যা এক সর্বকালীন রেকর্ড৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.