অভিরূপ দাস: প্রথিতযশা, স্বনামধন্য চিকিৎসকরা রয়েছেন বাংলায়। তাঁদের ছেড়ে সুদূর ভেলোরে কেন ছুটছেন পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা? নিজের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি দিয়ে তার প্রমাণ দিলেন বারাকপুরের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল। সে নথি দেখে চোখ কপালে তুলেছে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন।
বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে বিকাশচন্দ্র মণ্ডলের ১০ দিনের চিকিৎসার বিল ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা। অন্যদিকে ভেলোরের ক্রিশ্চান মেডিক্যাল কলেজে ওই একই ব্যক্তির ১৯ দিনের চিকিৎসার বিল মাত্র ১ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা। কীভাবে এত ফারাক? বাংলার বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভেলোরের ওই বিল খতিয়ে দেখতে বলেছে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। কমিশন চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই বিল দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেন অগুনতি মানুষ বাংলায় প্রথিতযশা চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও দাক্ষিণাত্যে চলে যান।
যে ঘটনার প্রেক্ষিতে এই চিকিৎসার বিল তা ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের। পথ দুর্ঘটনায় পায়ে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন বিকাশবাবু। পায়ের চোট নিয়ে তিনি ভরতি হন বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালে। সেখানে ১০ দিন ভরতি ছিলেন তিনি। ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি চিকিৎসা বাবদ বিল হয় ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা। শুধুমাত্র প্লাস্টার-গজকাপড় বাবদই বিল নাকি ১ লক্ষ টাকা! ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে জানান পায়ের অবস্থা ভাল নয়। তা কেটে বাদ দিতে হতে পারে। এমন ঘটনা শুনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে মণ্ডল পরিবার। তড়িঘড়ি রোগীকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে তামিলনাড়ুর ভেলোরের ক্রিশ্চান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১৯ দিন চিকিৎসা চলে। আপাতত তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। ক্রাচে ভর করে হাঁটলেও পা বাদ দিতে হয়নি বিকাশবাবুকে। আর বিল? বিকাশবাবুর কথায়, “১৯ দিন অত্যাধুনিক চিকিৎসা পেয়েছি। বিল ১ লক্ষ টাকার সামান্য বেশি।”
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অতিরিক্ত বিল করার কারণেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে বড় সংখ্যক রোগী ভেলোরে চলে যাচ্ছে। ক্রিশ্চান মেডিক্যাল কলেজের বিল ফটোকপি করে দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের বড় বড় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিকে। কমিশনের আশা রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলি এই বিল থেকে শিক্ষা নেবেন। বাইপাসের ধারের ওই হাসপাতালকে নতুন করে বিল করতে বলেছে স্বাস্থ্য কমিশন।
এদিকে, ‘Association of hospitals of Eastern India’ রূপক বড়ুয়া বলেন, “ভেলোরের হাসপাতালের সঙ্গে কলকাতার হাসপাতালের তুলনা উচিত নয়। কারণ, ভেলোরের হাসপাতালগুলি ভরতুকি প্রাপ্ত। সেগুলি চালায় ট্রাস্টি বোর্ড। বরং তামিলনাড়ুর বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার খরচ কলকাতার তুলনায় অনেকটা বেশি। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে কমিশন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.