ছবি: প্রতীকী
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: শুকনো খটখটে, উষর ভূ-প্রকৃতিকেই বদলে দিচ্ছে ভূমিরূপ। রুখাশুখা পুরুলিয়ার পতিত জমিকে পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি কাজ হারিয়ে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান করে পুনরুত্থান ঘটাচ্ছে ‘মাটির সৃষ্টি’। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বপ্নের প্রকল্প
মাত্র দেড় মাসেই রাঙামাটি পুরুলিয়ায় যেন নতুন আশার বীজ বুনে দিয়েছে।
সেই কাজ দেখতে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের সচিব দিব্যেন্দু সরকার শুক্রবার থেকে পুরুলিয়ার ব্লকে ব্লকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। লক্ষ্য, এই নজরকাড়া কাজ পশ্চিমাঞ্চলের বাকি জেলাগুলিতেও রূপায়ণ করা। শনিবার বনমহল বান্দোয়ানের গুড়ুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভালু গ্রামে বিশাল টিলা জুড়ে পরিখা খনন দেখে অভিভূত হয়ে যান। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি বলেন, “পুরুলিয়ায় মাটির সৃষ্টির কী কাজ হচ্ছে, ভালু তার বড় উদাহরণ।”
কেমন সেই কাজ? কৃষি, পশুপালন, মৎস্য চাষ, উদ্যানপালন, পর্যটন এবং একশো দিনের কাজের সম্পদ সৃষ্টি একই ছাতার তলায় নিয়ে এসে একটি সুসংহত পরিকল্পনা রূপায়িত হচ্ছে প্রতিটি ভূখণ্ডের জন্য। এক দপ্তরের কাজ যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে অন্য দপ্তরের পরিকল্পনা।
ঠিক যেন রিলে রেসের ব্যাটন হস্তান্তরিত হচ্ছে এক হাত থেকে অন্য হাতে। আর এই কর্মকাণ্ডের মূল চালিকাশক্তি স্বনির্ভর দল, কৃষক, সেইসঙ্গে কর্মহীন হয়ে জেলায় ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিক। এখনও পর্যন্ত এই জেলায় প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিযায়ীকে এই প্রকল্পের আওতায় কাজ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলছেন, “করোনার মত এই মহামারীর ছোবলেও জীবন ও জীবিকা দুটিকেই গুরুত্ব দিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখেছে এই প্রকল্প। একদিকে পতিত জমির পুনরুদ্ধার। অন্যদিকে পরিযায়ী শ্রমিকের পুনরুত্থান।”
প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২১০০ একর জমিকে চিহ্নিত করে ১৯৫৩ একর জমিকে জলসংরক্ষণ ও মৃত্তিকা ক্ষয় রোধের মাধ্যমে সেচসেবিত করার কাজ চলছে। উদ্যানপালন ও ১০০ দিনের কাজকে সামনে রেখে মোট এক লক্ষ বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ৮০ হাজার ফলের চারা। তাই আগামী
তিন বছরে ১৩ হাজারের বেশি ফল উৎপাদন সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে ৬২৫ একর জমিতে চলছে বিকল্প চাষের কাজ। এছাড়া মৎস্য দপ্তরের মাধ্যমে যে পুকুর খনন চলছে, সেই কাজে ১৫৪ কুইন্টাল মাছ উৎপাদন হবে। রয়েছে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কাজে পরিবেশ বান্ধব উদ্যান তৈরির কর্মসূচিও। যার মাধ্যমে পরোক্ষ অর্থনৈতিক কাজ প্রসারিত হবে। এছাড়া এই প্রকল্পকে মাথায় রেখেই আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তায় কিষাণ ক্রেডিট কার্ডও প্রদান করা হচ্ছে।
ছবি: অমিত সিং দেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.