Advertisement
Advertisement

বিধায়ক খুনের জেরে তৎপর প্রশাসন, বাড়ল জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা

নিরাপত্তা বাড়ল একাধিক নেতা-মন্ত্রীর৷

  West Bengal govt tighten sequrity of MLAs and Political Leaders

ফাইল ছবি।

Published by: Tanujit Das
  • Posted:February 12, 2019 3:10 pm
  • Updated:February 12, 2019 3:10 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ককে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা৷ যা নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি৷ আর এই খুনের ঘটনাই রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের৷ বিধায়কদের নিরাপত্তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনের উপর মহল৷ এই ঘটনার জেরে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, শাকদলের একাধিক নেতা ও বিধায়কের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে রাজ্যের গোয়েন্দাদের তরফে৷ নিরাপত্তা আঁটসাঁট করা হয়েছে উত্তরের কোচবিহার ও মালদহ জেলার জনপ্রতিনিধিদের এবং দক্ষিণে একদা মাও পরিবেষ্টিত পুরুলিয়ার শাসকদলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীদের৷

[ডানলপের বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড, বন্ধ সড়ক ও রেলপথ ]

Advertisement

জানা গিয়েছে, এই খুনের ঘটনার জেরে কোচবিহার ও মালদহ জেলার জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ। ইতিমধ্যে কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় এবং সিতাই কেন্দ্রের বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়ার নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়িয়ে এক থেকে দুই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চিন্তার কারণ রয়েছেন কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামীকে নিয়ে। কারণ শুরু থেকেই তিনি নিরাপত্তা রক্ষী নিতে অস্বীকার করেন। সোমবার ফের বিধায়কের কাছে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী পাঠানো হয়। এবারও তিনি ফিরিয়ে দেন। জেলার পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তা বলেন, “কোথায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর প্রয়োজন সেটা রিভিউ কমিটি ঠিক করে। এদিন কমিটির বৈঠক হয়েছে।’’ বিধায়ক মিহির গোস্বামী জানিয়েছেন, তাঁর নিরাপত্তারক্ষীর প্রয়োজন নেই। তিনি নিজেকে একজন সাধারণ তৃণমূল কর্মী বলে মনে করেন। তাই তাঁর নিরাপত্তা তৃণমূল কর্মীরাই দেন। ওই কারণে পুলিশের আবেদন ফিরিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বিধায়ক থাকার সময় মিহিরবাবু নিরাপত্তারক্ষী নেননি। ২০১৬ সালে পুনরায় বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে নিরাপত্তারক্ষী ফিরিয়ে দেন। ফের সোমবার একই কাজ করে জেলা পুলিশ কর্তাদের চিন্তায় ফেলেছেন।

পাশাপাশি মালদহের বিধায়কদেরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখলেন রাজ্য পুলিশের মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি সুজিত সরকার। সোমবার সন্ধ্যায় জেলার বিধায়কদের নিয়ে ইংলিশবাজার থানায় একটি বৈঠক করেন ডিআইজি-সহ জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ওই বৈঠক থেকে জেলার বিধায়কদের একজন করে দেহরক্ষী বাড়ানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বৈঠকে বাম, তৃণমূল ও কংগ্রেসের বিধায়করা উপস্থিত ছিলেন। পরে জেলার বিধায়কদের দেহরক্ষীদের নিয়ে আলাদাভাবে একটি বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি। সেই বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন মালদহের দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অরবিন্দ সরকার ও দীপক সরকার এবং সদর ডিএসপি বিপুল মজুমদার। সম্প্রতি তৃণমূলের গোষ্ঠী বিবাদের জেরে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে দিনহাটা। সিতাই এলাকার পরিস্থিতি আরও জটিল। যুব গোষ্ঠীর সঙ্গে মূল গোষ্ঠীর বিবাদ চরমে উঠেছে। বিগত কয়েক মাসে জেলায় শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। সমস্ত দিক মাথায় রেখেই সাংসদ তথা যুব সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় এবং সিতাই কেন্দ্রের বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়া নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রিভিউ কমিটি নিয়েছে। শুধু তাই নয়, অন্য জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা রক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না, সেটা নিয়ে পুনরায় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

[সরস্বতী পুজোয় বাইক বাজানোয় আপত্তি, প্রতিবাদীকে পিটিয়ে খুন মুর্শিদাবাদে]

উত্তরবঙ্গের মতোই সোমবার পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুরের তৃণমূলের দুই পুর প্রধানকে নিরাপত্তারক্ষী দিল জেলা পুলিশ প্রশাসন। এদিন সকাল থেকেই পুরুলিয়ার পুরপ্রধান শামিম দাদ খান ও ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকারকে বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে মন্ত্রী, সভাধিপতি, সাংসদ, বিধায়কদের নিরাপত্তা আরও আঁটসাঁট করেছে পুলিশ। শাসক দলের এই গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধিদের যাদের দু’জন করে রক্ষী ছিল তাঁদেরকে একজন করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনও রক্ষী ছুটিতে গেলে অন্যজন সামাল দিতে পারেন। সাধারণভাবে এই জেলার উল্লেখযোগ্য জনপ্রতিনিধিরা দু’জন তাঁদের রক্ষী রাখেন। গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধিদের রক্ষীর হাতে একে ৪৭-এর মতো আগ্নেয়াস্ত্রও দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সোমবার বিকালে এই বিষয়ে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ শাসক দলের একাধিক জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্কিট হাউসে বৈঠক করে। এই বৈঠকে হাজির ছিলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার-সহ রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘এটা রুটিন বৈঠক। নিরাপত্তা নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে।”

পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বৈঠকে যোগ দেওয়া জনপ্রতিনিধিরা কোনও এলাকায় গেলে আগে থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করে যেতে বলা হয়েছে। কোন জনপ্রতিনিধির রক্ষী যাতে সাধারণ পোশাকে না থাকেন সেই সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়। তাঁদের ছুটি যাতে কম দেন জনপ্রতিনিধিরা সেই কথাও বলেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। এদিন বৈঠক শেষে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করি। আম জনতাই আমাদের প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু এখন বিজেপি যেভাবে খুনোখুনির রাজনীতি শুরু করেছে তাতে আমাদেরকে সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হবে। আমি দলের নেতা-কর্মীদের সেই কথাই বলেছি।” পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, মন্ত্রী, সভাধিপতি, সাংসদ, সাত বিধায়ক ছাড়াও তিন জেলা পরিষদের সদস্য, একজন জঙ্গলমহল এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা ব্লক তৃণমূলের কার্যকারী সভাপতি, জেলা যুব সভাপতি ও এক জেলা সাধারন সম্পাদকের নিরাপত্তা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে বলে খবর।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement