দীপঙ্কর মণ্ডল ও সুব্রত বিশ্বাস: কোভিড বিধি মেনে বাংলায় লোকাল ট্রেন (Local Train) চালুর ছাড়পত্র দিল নবান্ন। কী কী নিয়ম মেনে, কবে থেকে লোকাল ট্রেনের চাকা ফের গড়াবে, তা চূড়ান্ত ঘোষণা হবে ৫ নভেম্বর। সোমবার নবান্নে রাজ্য প্রশাসন ও পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তাদের বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। আগামী সপ্তাহ থেকেই রাজ্যে যে ফের লোকাল ট্রেন চালু হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত।
লকডাউনের (Lockdown) গোড়া থেকেই গোটা দেশে বন্ধ ছিল লোকাল ট্রেন পরিষেবা। আনলকের পঞ্চম পর্যায়ে কয়েকটি রাজ্যের আরজিতে সাড়া দিয়ে সীমিত সংখ্যায় লোকাল ট্রেন চালানোর অনুমতি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। এদিকে, বাংলায় স্রেফ স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেন চলছিল। তাতে চড়তে চেয়ে সরব হয়েছেন যাত্রীরা। সম্প্রতি এই দাবিতে রণক্ষেত্র হয়েছে হাওড়া-সহ একাধিক স্টেশন। এরপরই রেলের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।
সোমবার নবান্নে আসেন রেলের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা চলে। তারপরই বাংলায় ট্রেন চালানোয় ছাড়পত্র দেয় নবান্ন। তবে কঠোরভাবে কোভিডবিধি মানতে হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, সাধারণভাবে হাওড়া-শিয়ালদহ ডিভিশনে যে সংখ্যক ট্রেন রোজ চলে, নিউ নর্মালে স্বাভাবিকভাবেই সেই সংখ্যক ট্রেন চলবে না। আপাতত প্রতিদিন ১০-১৫ শতাংশ ট্রেন চলাচল করবে। কয়েকদিনের মধ্যে তা ২৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে ট্রেনে মানতে হবে কোভিড বিধি। মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। কমবে ট্রেনের যাত্রী সংখ্যাও। প্রতিটি ট্রেনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারে বলে জানানো হয়েছে। রেলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিটি লোকাল ট্রেনে ১২০০ জন যাত্রীর আসন রয়েছে। এবার হয়তো ট্রেন পিছু ৬০০ জন যাত্রী উঠতে পারবেন।
টিকিট কাটার পদ্ধতি বদলাবে কি না, কিংবা সকলে ট্রেনে ওঠার সুযাগ পাবেন কি না অথবা হকাররা ট্রেনে উঠতে পারবেন কি না সে সম্পর্কে এদিন স্পষ্টভাবে কিছুই জানানো হয়নি। এ সমস্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে ৫ নভেম্বর। এই বিধিনিষেধে আগামী দিনে চরম বিশৃঙ্খলা ও ঝামেলার আশঙ্কা করেছে আরপিএফ ও জিআরপি। সোমবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত নির্দেশের পর রীতিমতো তটস্থ বিভাগগুলো।
হাওড়া ডিভিশনের আরপিএফ কর্তার কথায়, দৈনিক এই ডিভিশনে সাধারণ যাত্রীর সংখ্যা সাড়ে নয় লক্ষ। আরপিএফ পোস্ট ২১। জিআরপি থানার সংখ্যা ১৩। সেখানে ১৯৩টি স্টেশন। যার মধ্যে প্রায় দশটি স্টেশনে লোকাল ট্রেনের চাপ থাকবে। এই পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। শিয়ালদহ ডিভিশনে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা। এই ডিভিশনে ২০৩টি স্টেশন রয়েছে। সেখানেও প্রায় দেড়শো স্টেশনে সরাসরি লোকাল ট্রেনের চাপ পড়বে। ওই ডিভিশনে আরপিএফ পোস্ট ২০টি, জিআরপি থানা ১৪টি। এই নিরাপত্তা কর্মী দিয়ে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। জনৈক ডিএসপির মতে, শিয়ালদহ বিভিন্ন স্টেশন বরাবরই স্পর্শকাতর এলাকা। এই স্টেশনে ঘেরাটোপের মধ্যে আনা অসুবিধার। বেড়া টপকে, অফসাইড দিয়ে যাত্রীরা হইহই করে ট্রেনে উঠলে তাঁদের প্রতিরোধ করা মুশকিল। এক্ষেত্রে নিত্য ঝামেলা, অশান্তি লেগেই থাকবে বলে মনে করেছেন কর্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.