Advertisement
Advertisement
Bankura

ওঝার জড়িবুটিতে ঘা বদলে গেল ক্যানসারে! ২ আক্রান্তের শাপমুক্তি ঘটাল সরকারি হাসপাতাল

বুজরুকি নয়, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন, বলছেন চিকিৎসকরা।

West Bengal govt hospital lends new lease of life to two cancer victims | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:February 23, 2023 9:41 am
  • Updated:February 23, 2023 9:41 am  

টিটুন মল্লিক,বাঁকুড়া: মুখগহ্বর এবং নাকের ভিতর ঘা সারাতে ওঝার তাবিজ-ঝাড়ফুঁক-তুকতাকে ভরসা রেখেছিলেন দুই গ্রামবাসী। অন্ধবিশ্বাসের জেরে দীর্ঘ টালবাহানার ফলে সামান্য ঘা পরিণত হয়েছিল ক্যানসারে। সঠিক সময় চিকিৎসা না হলে তাঁদের প্রাণহানিও হতে পারত। এমন সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে দুই রোগীর প্রাণ বাঁচাল বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ। বাঁকুড়ার এই হাসপাতালে শাপমুক্তি ঘটল তাঁদের।

রোগ সারানোর জন্য এখনও একবিংশ শতকে কুসংস্কারের এমন নজির দেখে হতবাক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বুজরুকি নয়, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: আজ শুরু মাধ্যমিক-মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা, প্রশ্নপত্র ফাঁস-গণ টোকাটুকি রুখতে কড়া পর্ষদ]

জানা গিয়েছে, জামতোড়ার ৬২ বছরের অমিত দত্ত বছর দুয়েক ধরে মুখগহ্বরে ক্যানসারে আক্রান্ত। পেশায় পরিবহণ এজেন্ট অমিত সংক্রমণের হাত থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ওঝার দোরে-দোরে ঘুরেছেন। সম্প্রতি তাঁর মুখগহবরের ওই সংক্রমণ ক্যানসারের আকার নেয়। অমিতবাবুর মতোই নাকের ভিতর ছোট্ট ঘা সারাতে ঝাড়ফুঁক-তুকতাকে ভরসা রেখেছিলেন বাঁকুড়ার হেলনা-শুশুনিয়ার বাসিন্দা বেলাদেবী। তাবিজ-কবজ পরেছেন। বেলাদেবী জানাচ্ছেন, ওঝা বলেছিল,খেঁজুর গাছের তলা থেকে মাটি এনে খেলে ক্ষত সেরে যাবে। সঙ্গে জড়িবুটি জাতীয় ওষুধও দিয়েছিল। রোগ সেরে যাওয়া তো দূরে থাক, উলটে প্রৌঢ়ার নাকের ঘা ডান চোখের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে মাস তিনেক আগে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসেন বেলাদেবী। বর্তমানে এই দুই ক্যানসার আক্রান্ত রোগী বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি ওয়ার্ডে বসে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার প্রহর গুনছেন।

যাটোর্ধ্ব অমিতকে প্রশ্ন করা হল, ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার আগে কেন কোনও চিকিৎসা কেন্দ্রে যাননি? অমিতের জবাব, “প্রতিবেশীরা অনেকেই বলেছেন ওঝার তাবিজ, জড়িবুটি এবং ঝাড়ফুঁকে সুস্থ হয়েছেন তাঁরা। সেই বিশ্বাসেই একের পর এক ওঝার কাছে গিয়েছিলাম। তাতেই সময় নষ্ট হয়েছে।” কথাগুলো বলার সময় অমিতবাবুর কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক মনোজ মুখোপাধ্যায়। কথাগুলো শুনতে শুনতে তিনি বলেন, “বর্তমানে বহু আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। যার দৌলতে সময়ে চিকিৎসা শুরু করা হলে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকেও রোগমুক্ত করা সম্ভব। পরিকাঠামোর অভাব থাকা সত্বেত রোগ নির্ণয়ের চার সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা হয় এই দুই ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর। জেলাস্তরের এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ক্যানসার আক্রান্ত এই দুই রোগীর ক্ষতস্থান কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ওই ক্ষতস্থান ঢাকতে ওই রোগীদের শরীর থেকেই মাংস ও চামড়া নেওয়া হয়েছে।”

[আরও পড়ুন: ইন্টারনেট ঘেঁটে নিজে শিশুর চিকিৎসা নয়, অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে সতর্ক পুরসভা]

হাসপাতাল সূত্রে খবর, সমস্তরকম ঝুঁকি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিচারবিভাগীয় প্রধান তথা প্রফেসর চিকিৎসক সোমনাথ সাহা, চিকিৎসক অরবিন্দ ভার্মা, চিকিৎসক রাজেশ হাঁসদা। এবং অপারেশনের দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ক্যানসার সার্জারির অভিজ্ঞ চিকিৎসক মনোজ মুখোপাধ্যায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement