ফাইল ছবি।
স্টাফ রিপোর্টার: পুজোর মুখে সাত জেলায় বন্যার শঙ্কা! পড়শি ঝাড়খণ্ডে ভারী বর্ষণের জেরে মাইথন, পাঞ্চেত ড্যাম থেকে জল ছাড়তে হয়েছে। তার উপর এ রাজ্যেও নিম্নচাপের জেরে লাগাতার বৃষ্টি। ফলে, বিপদের মুখে পড়েছে সাত জেলা-বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি এবং হাওড়া। যা পরিস্থিতি তাতে আপাতত বৃষ্টি কমার কোনও লক্ষণ নেই। বরং আজ, মঙ্গলবার থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রবিবার ঝাড়খণ্ডে ৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ডের জল নেমে আসবে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে। ফলে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সোমবার জেলাগুলিকে নিয়ে নবান্নে জরুরি বৈঠকে বসলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। জেলাগুলিকে সতর্ক করে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কী কী সাবধানতা ও পদক্ষেপ করতে হবে।
নবান্ন সূত্রের খবর, রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ মাইথন ড্যাম থেকে ৩০ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত ড্যাম থেকে ৫০ হাজার কিউসেক, মোট ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। সোমবার সকালে ফের দুই জলাধার থেকে এক লাখ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। মাইথন জলাধার থেকে ৪৫ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৫৫ হাজার কিউসেক। ডিভিসি জানিয়েছে, এক দিকে দামোদর ও বরাকর উপত্যকা এলাকায় গত দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ায় সেই জল মাইথন জলাধারে এসে জমা হয়েছে। তেমনই ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট থেকে জল ছাড়ায় সেই জল এসে জমা হয়েছিল পাঞ্চেত জলাধারে। ঝাড়খণ্ডে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপের জেরে এ রাজ্যেও চলছে দফায় দফায় বৃষ্টি। তার উপর দফায় দফায় জলাধারগুলি থেকে জল ছাড়ায় বেড়েছে এ রাজ্যের নদীগুলির জলস্তর। ফলে বন্যা পরিস্থিতি সাত জেলায়। তবে, রাতে পাওয়া খবর, পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ ১ লক্ষ কিউসেকের নিচে নেমে এসেছে।
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেচ দপ্তরের সচিবও। সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের বলা হয়েছে, ডিভিসি ও ঝাড়খণ্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখতে। জেলাগুলো যাতে পাঁচ ঘণ্টা অন্তর রিপোর্ট পাঠায় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরে তা নিয়েও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ওই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ করা হবে। বৈঠকে উপস্থিত জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেচ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে হবে। যেখানে যেখানে বাঁধ ভাঙার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রচুর বালির বস্তা। জেলার কোনও জায়গায় যদি অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। রিপোর্ট করতে হবে নবান্নকে। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, জল ছাড়ার ফলে প্লাবিত হতে পারে হাওড়া ও হুগলির মতো নিম্ন অববাহিকা। এখানকার বাসিন্দাদের প্রয়োজনে উঁচু জায়গায় সরাতে হবে। বন্যা মোকাবিলায় বালির বস্তাও প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রস্তুত রাখতে হবে ত্রাণসামগ্রী। বিপর্যয় মোকাবিলায় ২৪ ঘণ্টা নজর রাখার জন্য কন্ট্রোল রুম ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে।
প্রতি পাঁচ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টি ও পুরো পরিস্থিতির রিপোর্ট দেওয়া হবে কন্ট্রোল রুমকে। জানা গিয়েছে, মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরই সাত জেলাশাসক আলাদাভাবে মহকুমাশাসক, বিডিও, পুলিশ প্রশাসন, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর, স্বাস্থ্য আধিকারিক, পিএইচই ও সেচ দপ্তরের আধিকারিক, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক সেরে ফেলেন। ইতিমধ্যেই টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত রাজ্যের একাংশ। পুনর্ভবা ও টাঙন নদীর জলে প্লাবিত মালদহের বেশ কয়েকটি ব্লক। কংসাবতীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু এলাকায় নিমজ্জিত। বানভাসি হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে মুণ্ডেশ্বরী। বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, হুগলিরও বহু এলাকা প্লাবিত। আশঙ্কার মেঘ সাত জেলার পুজো কর্তাদের মুখে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.