নব্যেন্দু হাজরা: গাড়ির নম্বর ডব্লুবিএ ১। সবুজ রঙের বেলভেডিয়ার গাড়িটিতে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন চড়তেন ড.বিধানচন্দ্র রায়। তাঁর মৃত্যুর পর এই গাড়িটিকে সংরক্ষণ করে রাজ্য সরকার। সেটি পরিবহণ দপ্তরের এলগিন রোডের পুলকারের গ্যারাজে সংরক্ষণ করা রয়েছে। বঙ্গের প্রথম রাজ্যপাল চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী যে গাড়িতে চড়তেন সেটিকেও সংরক্ষিত করেছে রাজ্য সরকার। সেই তালিকায় কি আরও একটি গাড়ি ঢুকতে চলেছে! নবান্নের অন্দরে এখন সেই খবরই ঘুরপাক খাচ্ছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সাদা অ্যাম্বাসাডর গাড়িটি সংরক্ষিত করার ভাবনা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজ সংকেত পেলেই বুদ্ধবাবুর বুলেটপ্রুফ সাদা অ্যাম্বাসাডর গাড়িটিকেও সংরক্ষণ করা হবে। এই গাড়িটি বুদ্ধবাবুর শেষযাত্রার দিনও তাঁর সঙ্গী ছিল। অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে এই গাড়ির সঙ্গে।
গত ৮ আগস্ট প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু এখনও যেন তাঁর অপেক্ষায় সেই সাদা অ্যাম্বাসাডর। যার নম্বর প্লেটে লেখা—গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল, ডব্লুবি ০৬-০০০২। তাঁর মৃত্যুর পরও সপ্তাহখানেক নিয়ম করে রোজ সকালে বুদ্ধবাবুর পাম অ্যাভিনিউর বাড়িতেই পাঠানো হত গাড়িটিকে। তার পর থেকে রাজ্য সরকারের পরিবহণ দপ্তরের অধীনে আছে সাদা অ্যাম্বাসাডর গাড়িটি। দক্ষিণ কলকাতার এলগিন রোডে সরকারি পুলে সেটি রাখা আছে। বুদ্ধবাবু অসুস্থ হয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়ার পরও রুটিন মেনেই প্রত্যেকদিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর বাড়িতে চলে যেত বাহন। রাতে ফিরত সরকারি পুলের গ্যারাজেই। স্টিয়ারিং থাকত ওসমানের হাতে। তাঁর অবসরের পর শেষের কয়েকবছর অবশ্য গাড়ি চালাতেন অন্য চালক। এই গাড়ি চড়েই তাঁর শেষ হয়েছিল রাজনৈতিক সভা।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেতেন। তাই কলকাতা ছাড়াও নয়াদিল্লিতে বুদ্ধদেবের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ অ্যাম্বাসাডর থাকত বঙ্গভবনে। এই ০০০২ নম্বর প্লেটের অ্যাম্বাসাডর নয়াদিল্লিতেই ছিল। ২০০০ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে অ্যাম্বাসাডরে চড়তেন, তার নম্বর ছিল ০০০১। ২০১১ সালের ১৩ মে ০০০১ গাড়িতে চড়েই রাজভবনে গিয়ে পদত্যাগ করেন বুদ্ধবাবু। পরে ওই অ্যাম্বাসাডর গাড়িতে গোলমাল দেখা দেয়। তাই তখন নয়াদিল্লির বঙ্গভবনে ০০০২ নম্বর প্লেটের যে বুলেটপ্রুফ অ্যাম্বাসাডর ছিল সেটা কলকাতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়। তার পর থেকে এটিই ছিল তাঁর সঙ্গী শেষদিন পর্যন্ত। তাই তাঁর চলে যাওয়ার পর গাড়িটিকে সংরক্ষণের চিন্তাভাবনা করছে রাজ্যের সরকার। সেক্ষেত্রে গাড়িটিকে স্ক্র্যাপ করা হবে না। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িটি সংরক্ষিত হলে ভবিষ্যতে সেটা ভিনটেজ কার হিসাবে থেকে যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.