তরুণকান্তি দাস: রসগোল্লা অথবা তুলাইপাঞ্জি চাল তো ছিলই। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হল মাদুরকাঠি, মুখোশ, ডোকরা, টেরাকোটা-সহ নয়টি পণ্য। যার জিআই তকমা বাংলার পকেটে। দেশের মধ্যে সংখ্যার নিরিখে সবচেয়ে বেশি।
রসগোল্লা আদতে বাংলার নাকি ওড়িশার, তা নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের অবসান হয়েছে। বাংলা ও বাঙালি মানেই রসগোল্লা, এই চিরায়ত ধারণায় জিআই সিলমোহর পড়ার পর আরও কয়েকটি পণ্য নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। যে যুদ্ধ জয়ের পর খুশি রাজ্য সরকার। সরকারি সূত্রে খবর, দশটির জিআই প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।
বিশ্ববাজারে বিপণনে জিআই, জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন মার্কের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও বটে। ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে এই জিআই তকমা পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলা। তার পর আছে অন্ধ্রপ্রদেশ। তাদের চারটি জিনিসে জিআই পেয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সেখানকার বানগানপাল্লে আমও। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নিয়ম মেনে কেন্দ্র এই স্বীকৃতি দেয় ভৌগোলিক অবস্থান ও নির্দিষ্ট মানের ভিত্তিতে। শুধু ঊৎকর্ষ নয়, তার উৎপাদন-সূত্র এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব পায়। আসলে ওই পণ্য উৎপাদনের শুরু কোথা থেকে তা-ও অনেকটা ঠিক হয়ে যায় জিআই তকমা থেকে। যা অন্য কেউ আর দাবি করতে পারে না।
[ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন ক্ষুব্ধ সাংসদ কল্যাণ ]
সরকারি সূত্রে খবর, গতবছর যখন রসগোল্লার জিআই নিয়ে পড়শি রাজ্য ওড়িশার সঙ্গে লড়াই সবার মুখে মুখে ফিরছে তখন গোপনে আরও কিছু পণ্যের তকমা পেতে ঝাঁপানো হয়েছিল। সাফল্যও মিলেছে। মেদিনীপুরের মাদুরের বিশ্বজোড়া খ্যাতি থাকলেও মাদুরকাঠি কোথা থেকে আসে তা নিয়ে আইনি টানাপোড়েন চলেছিল বেশ কিছুদিন। এবার সেই মাদুরকাঠির জিআই মিলেছে। তা এখন মেদিনীপুরের। আরও স্পষ্ট করে বললে পশ্চিম মেদিনীপুরের। দক্ষিণ দিনাজপুরের কাঠের মুখা, ছৌ মুখোশ, পটচিত্র, টেরাকোটা, ডোকরা, গোবিন্দভোগ ও তুলাইপাঞ্জি চাল নিয়ে ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন দপ্তর অনেকদিন ধরেই কাজ করছিল। দপ্তরের সহায়তায় পুরুলিয়ার ছৌয়ের একাধিক টিম ভাল কাজ করছে। এবার সেই মুখোশ যে আদতে রাঙামাটির এই জেলার শিল্পকীর্তি, তার স্বীকৃতি মিলল। তবে জিআই তকমা পাওয়ার বিষয়টি দেখে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর। জিআই তকমা পেলে পণ্য বিপণনের সময় লোগো লাগানো যায়। যা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। দপ্তর সূত্রে খবর, এই পণ্যগুলির বিশ্ববাজার ধরতে এবার আরও গুরুত্ব দিয়ে ঝাঁপানো হবে। দিল্লিতে বাণিজ্য সম্মেলনে বাংলার স্টলে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এগুলির প্রচার করা হবে যাতে তা রফতানির বাজার ধরতে পারে।
ভারতে ২০০৪-০৫ সালে দার্জিলিং চা প্রথম জিআই পেয়েছিল। সেদিক থেকে বাংলাই ছিল পথিকৃৎ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জিআই নিয়ে বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে। ফুলিয়া-শান্তিপুরের শাড়ি, চিৎপুরের আতরের মতো কিছু পণ্যের জিআই মিলেছে। ফলে তার বাজার বেড়েছে। ২০১৭-’১৮ সালে একেবারে নয়টি পণ্যের তকমা পাওয়ার মতো ঘটনা অবশ্য আগে কখনও ঘটেনি। যে অর্থবর্ষে তেলেঙ্গানার শতরঞ্চিতেও সিলমোহর পড়েছে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনের। এবং আরো একটি চমক রয়েছে এখানে। বেনারসি পানের খ্যাতি থাকলেও সবাইকে টেক্কা দিয়ে বিশেষ পান চাষ ও বানানোর তকমা আদায় করেছে বিহারের ভাগলপুর। এবার বেনারসি পানের পাশাপাশি ভাগলপুরি পান খেয়েও গাইতে দেখা যেতে পারে কোনও সিনেমায়, ‘খাইকে….।”
[ চিকিৎসার নামে নেশামুক্তি কেন্দ্রে মারধর, মৃত যুবক ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.