দেবশ্রী সিনহা ও রাহুল চক্রবর্তী: সিপিএম-এর সঙ্গ ছাড়লে দলের সংগঠন টিকিয়ে রাখাই কষ্টকর হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের৷ বছর দুয়েকের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ তারপরেই লোকসভার ভোট৷ ফলে যে কোনওভাবে সিপিএমকে সঙ্গে নিয়েই চলতে চায় প্রদেশ কংগ্রেস৷ তাই বারবার দিল্লিতে গিয়ে হাইকমান্ডকে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব বোঝানোর চেষ্টা করছে, বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে লাভই হয়েছে৷ একা লড়লে ৪৪টি আসনে জেতা যেত না৷
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্রের পর রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি দিল্লি গিয়ে দেখা করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে৷ রবিবার দিল্লি যাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা আবদুল মান্নান৷ সোমবার তাঁর সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে৷ হাইকমান্ড থেকে ডাক আসেনি৷ কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা প্রায়ই ছুটছেন দিল্লিতে৷ ঘনঘন প্রদেশ নেতৃত্বের দিল্লি যাওয়ার কারণ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক মহল৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৪৪টির মধ্যে অর্ধেকের বেশি আসনে সিপিএমের ভোটেই জিতেছে কংগ্রেস৷ তাই এখন সিপিএমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলাটাই কংগ্রেসের নেতাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে৷ যে কারণেই বিধানসভায় সিপিএম-কংগ্রেসের জোটের ছবিটা বারবার দেখা যাচ্ছে৷ ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ তারপর ২০১৯ সালে লোকসভা ভোট৷ একা লড়লে কংগ্রেসের ফল কোনও অবস্থাতেই যে ভাল হবে না, তা স্বীকার করে নিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা৷ তাই জোটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা যাতে সোনিয়া-রাহুল দেন, দিল্লি গিয়ে সেই চাপই বহাল রাখছেন অধীর, মান্নান, ওমপ্রকাশরা৷
সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন, প্রদেশ কংগ্রেস চেয়েছিল বলেই বামেদের সঙ্গে জোটে সম্মতি দিয়েছিল দিল্লি৷ তাই দিল্লি গিয়ে সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা একাধিক তথ্য দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, এবারের নির্বাচনে দলের ফল ভাল হয়েছে৷ সেইসঙ্গে এও তুলে ধরেছেন, দীর্ঘ ২০ বছর পর কংগ্রেস রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে৷ বিরোধী দলনেতা হয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক৷ কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে জোট যে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি, সেই তথ্যও দিল্লির কাছে তুলে ধরেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা৷ বামেদের সঙ্গে জোট আরও আগে করার দরকার ছিল বলে যুক্তি দেখিয়েছেন অধীর চৌধুরি৷ চাইছেন জোট ধরে রাখতে৷
তবে রাজ্য কংগ্রেস নেতারা সোনিয়া-রাহুলকে এও বোঝাচ্ছেন, সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব জোটের ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা নেননি৷ যার জেরেই ফল খারাপ হয়েছে৷ রাজ্য সিপিএমের নেতারা জোটে যতটা আন্তরিক ছিলেন, ততটা সক্রিয় ছিলেন না সিপিএমের দিল্লির নেতারা৷ বেশি আসনে লড়াই করে বামফ্রণ্ট কেন ভাল ফল করতে পারেনি সেই প্রশ্নও তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ বিধানসভা নির্বাচনে জোটের শোচনীয় ফল প্রসঙ্গে সিপিএমের সর্বভারতীয় নেতাদের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছে কংগ্রেস৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.